অহঙ্কারের একুশে

সানশাইন ডেস্ক : একুশ মানে এগিয়ে চলা। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের চেতনার শেকড়। একুশ আমাদের গর্ব। একুশ আমাদের অহঙ্কার। তাই প্রতি বছর আমরা একুশ পালন করি শোকের শক্তিকে শাণিত করতে। আমাদের মনে রাখতে হবে- শুধু আবেগে দিনটি পালন নয়।
দিনটিতে নয় কোনো আনন্দ উৎসব। এটি মহান শহীদ দিবস। এটা যেমন শোকের দিন, তেমনি শক্তি আর সাহসের অপরাজেয় বরাভয়। খালি পায়ে প্রভাতফেরির দিবস। শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন। বাঙালি চেতনায় অনড় শপথের দিন। শুধু একদিন নয়, প্রতিদিন যাপনে একুশকে ধারণের দিন। আর তাই জানতে হবে একুশের ইতিহাস।
অমর কেন একুশ? একুশে ফেব্রুয়ারি? এ দেশ ছিল আগে পাকিস্তানের শাসনে। পশ্চিমা শাসকরা তাদের উর্দু ভাষায় কথা বলাতে চেয়েছিল আমাদের। বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলার টুঁটি চেপে ধরতে চেয়েছিল তারা।
প্রতিবাদে বাঙালির ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। তারপর চরম প্রকাশ। সেদিন ১৯৫২ সাল। একুশে ফেব্রুয়ারি। সকালবেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙে ফেলে। আন্দোলনে নেমে পড়ে রাজপথে। পুলিশ গুলি চালায় তাদের ওপর। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। নাম জানা-অজানা শহীদ হন অনেকেই। ক্ষুব্ধ ঢাকা। উত্তাল সারা দেশ। পরদিন আবার রাজপথে বিক্ষুব্ধ আন্দোলন। এবার ছাত্রদের পাশে নামেন সাধারণ মানুষ। শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত হয় গায়েবানা জানাজা।
২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে একরাতেই গড়ে ওঠে স্মৃতিস্তম্ভ- শহীদ মিনার। ২৬ ফেব্রুয়ারি তা গুঁড়িয়ে দেয় সরকার। তারপরও ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। অবশেষে ১৯৫৪ সালের ৭ মে গণপরিষদের অধিবেশনে এ দেশের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায় বাংলা। সেই থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় শোক দিবস। এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে জাতীয় শহীদ মিনার সেই শোকের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাঙালির মাতৃভাষাকে ভালোবাসার চেতনা আজ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। একুশ এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ অর্জন বাঙালির। বাংলাদেশের। ১৯৯৮ সাল। জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান। তার কাছে আবেদন করা হয় একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য। এর প্রাথমিক উদ্যোক্তা কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালি- রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ