সর্বশেষ সংবাদ :

প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নেই পবায় আবাদি জমি নিঃশেষ হচ্ছে প্লটে !

পবা প্রতিনিধি:
সুজলা সুফলা এই দেশ দেশ বাংলাদেশ ইংরেজ শাসনামল থেকে শস্য ভান্ডারে ভরপুর। দেশের কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে কৃষি। ২০১৮ সালের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে মোট শ্রমশক্তির ৪০.৬ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে কৃষি এবং দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৪.১০ শতাংশ। দেশের অর্থনীতিতে এত বিশাল অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এই কৃষির মূল উপাদান হচ্ছে কৃষি জমি। কিন্তু দিন দিন এই কৃষি জমি যেন হারিয়ে হচ্ছে ।

 

 

 

রাজশাহীর জেলার উপকন্ঠ পবা উপজেলা। আর এই উপজেলায় দিন দিন কৃষি জমির পরিমাণ কমে আসছে। গত কয়েক বছরে উপজেলায় কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক । পুকুর খননে কৃষি জমির পরিমাণ কমে আসলেও এখন নিত্য নতুন শুরু করা হয়েছে বিলের আবাদি জমিতে সারি সারি প্লট নির্মাণ। প্রশাসনের উদাসীনতা, প্রভাবশালী ব্যাক্তি এবং কৃষকদের অধিক মুনাফার আর্কষণ দেখিয়ে এইসব আবাদি জমিতে এখন শুরু হয়েছে প্লট নির্মাণ। জানা যায় সাধারণ কৃষকদের কাছে থেকে কমমূল্যে রাস্তার পাশ্বের আবাদি জমিতে প্লট নির্মাণ করে পূর্বের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করা হয়ে থাকে। প্লট নির্মাণে কৃষি জমি বেছেঁ নেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে কৃষি জমি ভিটা জমির চেয়ে কয়েকগুণ দাম কম এবং কৃষি জমিতে প্লট বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই নির্মাণ করা যায়।

 

 

 

 

এই প্লট নিমার্ণে কয়েকটি সিন্ডিকেটসদস্যদের হাত বদল হয়। একশ্রেনীর লোকেরা যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভালো দেখে কৃষি জমি খোজঁ করতে থাকে। ভালো রাস্তার পাশে কৃষি জমি পেলে তারা তাদের প্রভাবশালী লোকেদের তথ্য দেয় । তখন কৃষকদের কাছে থেকে এই জমি ক্রয় করে তখন শুরু করা হয় প্লট নির্মাণ। প্রশাসন থেকে কোন চাপ নেই এবং অধিক মুনাফা পাওয়া যায় তাই কতিপয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের এই উপজেলায় কৃষি জমিতে প্লট নির্মাণ করার ধূম ফেলেছে।

 

 

 

 

মঙ্গলবার (১৪ ই নভেম্বর) সকালে নওহাটা পৌরসভার বায়া থেকে বাগধানী সড়কের পাশ্বে এবং দুয়ারি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশ্বের দেখা যায় রাস্তার পাশেই কয়েকটি জায়গায় কৃষি জমিতে প্লট নির্মাণ হয়েছে ও কয়েকজায়গায় প্লট নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দা সুমন আলীর কাছে থেকে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে এইরকম ভাবে প্লট ছিলো না । কিন্তু গত বছর থেকে আমাদের এই বিলে কৃষি জমিতে এবং কৃষির জমির পাশে প্লট নির্মাণ করে ফেলে রাখা হয়েছে। প্লট নির্মাণের আগে এই জমিগুলোতে নানা ধরণের সবজি হতো ধান হতো । কিন্তু এখন সারি সারি প্লট নির্মাণ করার পরে আর এই প্লট করা অংশে কোন ফসল চাষ হয় না। এইযে কৃষি জমি নষ্ট করে প্লট করা হচ্ছে এখানে কিন্তু প্রশাসন কিংবা কোন জনপ্রতিনিধি কোন ব্যাবস্থাই নিচ্ছে না। তারা যদি কৃষি জমি সংরক্ষণে একটু ব্যাবস্থা গ্রহণ করতো তাহলে প্লট করে এই কৃষি জমিগুলো নষ্ট হতো না।
এই দুয়ারি বিলের কৃষক আহাদ আলী দীর্ঘ ২৮ বছর যাবত এগুলো জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন। নিজের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি তিনি অন্যের জমিতেও শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তার কাছে এগুলো জমিতে প্লট নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবা এহন দিন বদলাইছে। আমাগো সময়ে এগলান জাগাতে আবাদ হইছে এমনকি এখনও আবাদ হইতাছে। কিনতু দেখতেই তো পাইতেছো দিন বদলাইছে, শহরে জমির দাম বেশি তাই এইরা এগলান আবাদি জমিতে বিল্ডিং করার লাইগা প্লট কইরতাছে।

 

 

 

সরজমিনে প্লট নিমার্ণের কাজের জায়গায় গিয়ে প্রকৃত মালিককে খুঁজে কাওকে পাওয়া যায়নি। তবে একজন নির্মাণ শ্রমিক নাম প্রকাশে অনি”ছুক হয়ে বলে তাদের এই কাজের জায়াগায় মালিক কয়েকদিন পর পর আসে। কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আবার চলে যায়। তারা টাকার বিনিময়ে এখানে কাজ করছে বলে জানান। এইছাড়াও পবা উপজেলার পাশ্ববর্তী রাজশাহী সিটি হাটের পাশ্বের ভিন্ন ভিন্ন নামে চলছে বাণিজ্যিক এই প্লট বেচাঁ-কেনা। এখানেও প্রশাসন থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
পবা উপজেলায় প্লট নির্মাণ বিষয়ে জানতে চাইলে পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিত সরকার মুঠোফোনে বলেন, প্লট নির্মাণে কেউ যদি অনিয়ম করে থাকে এবং কৃষি জমি নষ্ট করে নির্মাণ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইননুযায়ী কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।

 

 

একই বিষয়ে জানতে চাইলে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, একটি অসাধু চক্র জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে কৃষি জমিতে প্লট নির্মাণ করছে। তারা সরাসরি ডিসি অফিস থেকে জমির শ্রেণী কৃষি থেকে ভিটা বানিয়ে এনে তারপরে প্লট নির্মাণ করছে। তবে আমরাও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টিতে নজর দিয়েছি। কিভাবে কৃষি জমিতে প্লট নির্মাণ বন্ধ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি। তবে কেউ যদি নিয়মবর্হিভূত ভাবে কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

 

সানশাইন/সোহরাব

 


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৩ | সময়: ৭:৪৯ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর