সর্বশেষ সংবাদ :

তুচ্ছ ঘটনায় রণক্ষেত্র, নেপথ্যে উস্কানি

স্টাফ রিপোর্টার : তুচ্ছ ঘটনা থেকে স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। বাসে বসার বচসাকে কেন্দ্র করে শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকটি দোকান, মোটর সাইকেল ও একটি পুলিশ ফাঁড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী উভয়পক্ষই একে অন্যকে দোষারোপ করছেন।
নগর পুলিশের মতিহার জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল কালাম আজাদের বরাতে জানা যায়, শনিবার দুপুরে বগুড়া থেকে ‘ইসলাম’ পরিবহণের একটি বাসে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমীন আকাশ। বসার আসন আছে- বাসের সহকারী রিপনের এমন আশ^াসে আকাশসহ আরও কয়েকজন যাত্রী ওঠেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, বাসে আসন না দিতে পারায় যাত্রীদের সঙ্গে বাসের চালক শরীফুল ও সহকারী রিপনের বচসা হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আল-আমীনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে তার সহপাঠীরা বিনোদপুর বাজারে অবস্থান নেয়। বাসটি এসে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চালক শরীফুলকে মারধর করতে শুরু করেন। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বিনোদপুরের ব্যবসায়ীদের দাবি, মারধরের এক পর্যায়ে ওই চালক বিনোদপুর বাজারের ইমরান স্যু স্টোরে আশ্রয় নেয়। এসময় তাঁকে বাঁচাতে দোকান মালিক ইমরানের সঙ্গেও তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয় শিক্ষার্থীদের। একপর্যায়ে অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পরে শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ^বিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ও রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত হন। কিন্তু তাদের ওপরও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চড়াও হওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ব্যবসায়ীরা ধাওয়া দিলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতর চলে আসে।
শিক্ষার্থীদের দাবী, এসময় স্থানীয়রা গোলাম কিবরিয়ারসহ তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় এবং শিক্ষার্থীদের ওপর ইট ছুঁড়তে থাকে। তখন শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইট ছুঁড়লে পরিস্থিতি সংঘর্ষে মোড় নেয়। পরে আশপাশের হলগুলোতে থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ব্যবসায়ীদের সংগে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় মহাসড়কের পাশে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত পুলিশদের ব্যারাকেও আগুন দেয়। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে।
বিনোদপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী বাসের হেলপার ও ড্রাইভারকে মারতে শুরু করেন। পরে তারা দৌড়ে পাশের ইমরানের জুতার দোকানে গিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। তখন ইমরান তাদের রক্ষার চেষ্টা করলে তাকেও মারধর করেন শিক্ষার্থীরা। তখন অন্য দোকানিরা এগিয়ে এলে সবাই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে ৩০টি দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের হামলায় কয়েকজন দোকানদার আহত হয়েছেন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। আগুন লাগিয়ে দোকান পুড়িয়ে দিলেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।
এদিকে পুলিশের সময়মত ভূমিকা না নেয়া, পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ ও গুলি চালানোর অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ঘটনাটি অনেক আগেই সমাধান করা যেত। কিন্তু কয়েক দফা সংঘর্ষের পরও পুলিশ দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি। রাত ১০টার পরে অনেক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত হবার পর পুলিশ উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ মধ্যরাত পর্যন্ত দফায় দফায় চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত ১০টার দিকে ভারী টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ। স্থানীয়দের ইটের আঘাত ও পুলিশের গুলিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের বেশিরভাগই রাবি মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় বিশ^বিদ্যালয়ের বাস ও অ্যাম্বুলেন্সে ৮৭ জন শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে এক শিক্ষার্থীকে আইসিইউতে নেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত থেকে সাঁজোয়া যান নিয়ে ৭ প্লাটুন বিজিবিসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা রাবি ও রুয়েটের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়।
এদিকে স্থানীয়দের হামলা ও পুলিশের গুলির প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকে প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধান ফটকের সামনে আগুন জ¦ালিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় একপাক্ষিক সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে নিউজ২৪’র দুই সাংবাদিক মারধর ও ক্যামেরা ভাঙচুরের শিকার হন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। পরে ছাত্রলীগ ও অন্য ছাত্রসংগঠনের নেতাদের হস্থক্ষেপে তিনি তাঁর বাসভবনে ফিরে যান। এছাড়া এই ঘটনার প্রতিবাদে প্রক্টরের প্রতিকী কফিনে জানাযা করেছেন শিক্ষার্থীরা।


প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩ | সময়: ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ