পদ্মার পলিচর সবুজে সতেজ

নূরুজ্জামান, বাঘা: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মানদী। তার পাশ দিয়ে অবস্থান করছে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল। একসময় পদ্মা প্রমত্তা থাকলেও এখন তা শুকিয়ে পলি পড়ায় আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে।
নদীতে চর জেগে ওঠা এসব জমিতে এখন সারাবছর ধরে উৎপাদন করা হচ্ছে নানা প্রকার সবজি সহ সোনার ফসল। যা স্থানীয় চাহিদা পুরনের পাশা-পাশি রপ্তানি করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
অঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, একসময় চরাঞ্চলের জমিতে শুধু ধান, গম, পাট আর আখ চাষ করা হতো। কিন্তু এখন সেই জমিতে করা হচ্ছে আম বাগান, পেয়ারা বাগান, বরই বাগান, কলা বাগান সহ হরেক রকম সবজি চাষ।
বিশেষ করে প্রতি শীত মৌসুমে নদী বিধৌত চরাঞ্চল জুড়ে লক্ষ্য করা যায় নানা রকম সবজি। যার ব্যাতিক্রম ঘটেনি এবারও। এ অঞ্চলের কৃষকরা বর্তমানে বানিজ্যিক ভাবে নানা প্রকার সবজি চাষাবাদ করে স্থানীয় চাহিদা পুরনের পাশা-পাশি আমদানি করছে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সরেজিমনে ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে, উপজেলার নদী তীরবর্তী চকরাজাপুর ইউনিয়নের পলাশি ফতেপুর, দাদপুর, কালিদাসখালী, কলিগ্রাম, টিকটিকি পাড়া, করারি নওসারা, সরের হাট, চাঁদপুর এসব চরে এবার চাষ হচ্ছে আলু, বেগুন, টমেটো, কফি, লাও, মিষ্টি কুমড়া, সিম, করলা, পুঁই শাক, সরিষা ও লালশাক সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি।
এরমধ্যে পেঁয়াজ ও রসুন চাষে বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা বলছেন, ইতোমধ্যে নতুন পেঁয়াজ তোলা শুরু হয়েছে। এবার আশানুরুপ ফলন পাচ্ছে কৃষক।
পলাশি ফতেপুরের কৃষক আনোয়ার শিকদার জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে শীত কালিন সবজি হিসাবে কফি এবং বেগুন চাষ করছেন। এগুলো আবাদের পুর্বে জমিতে লাঙলের পরিবর্তে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হয়েছে। ফলে চাষাবাদের খরচ কমেছে। এছাড়া সেচের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে শ্যালো মেশিন। একটি মেশিনে ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া যায়।
তিনি জানান, শ্যালো মেশিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিজেল। কিন্তু ডিজেলের দাম এবার বেশি হওয়ায় সেচ খরচ কিছুটা বেশি পড়ছে। তবে চাষের খরচ এবং শ্রমিক কম লাগার কারণে চরের জমিতে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম। ফলে চাষিরা ফসল চাষ করে লাভবান হন।
অপর এক কৃষক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি এবছর তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ, তিন বিঘা জমিতে রসুন, এক বিঘা জমিতে লাও, দুই বিঘা জমিতে বেগুন, এক বিঘা জমিতে মুলা এবং দুই বিঘা জমিতে আলু চাষাবাদ করেছেন। এদিক থেকে সবচেয়ে পেঁয়াজ এবং রসুনে ভাল ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন শুধু আমি নই, আমার মতো চরাঞ্চলের সকল কৃষকই বর্তমানে নানা অর্থকারি ফসলের পাশা-পাশি সবজি চাষ করছেন। আর এ সকল সবজি স্থানীয় চাহিদা পুরণ শেষে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির জন্য চালান দেয়া হচ্ছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান জানান, চরাঞ্চলকে দেখলে এখন আর চর মনে হবে না। চারদিকে ফসলের চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে বিপুল পরিমাণ আম বাগান। ফলে চরে সবুজের বিপ্লব ঘটছে। বিশেষ করে প্রতি শীত মৌসুমে নানা প্রকার সবজি উৎপাদনে রেকট ভঙ্গ করছে এই ইউনিয়ন। বর্তমানে শীত শুরু হওয়ার পর থেকে সবজির কমতি নেই চরাঞ্চলে।
উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, চরের জমি খুবই উর্বর। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যে কোন ফসল বেশি পরিমান চাষাবাদ হচ্ছে। এ কারণে কৃষকদের মাঝে ফসল ফলানোর আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তার মতে, গত কয়েক বছর ধরে সবুজের নীরব বিপ্লব ঘটেছে পদ্মার চরাঞ্চলে।
উপজেলার সমতল এলাকার ৬ ইউনিয়ন এবং দুই পৌরসভা মিলে যে পরিমান সবজি চাষ না হয়, তার চেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নে।
তিনি মাঝে মধ্যে এ সকল ফসল পরিদর্শনে যান এবং কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলেও জানান।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ