মোহনপুরে আলোচিত সেই প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

মোহনপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের আলোচিত সেই প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়েছে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড।
তিনি বিদ্যালয়ের জমি জালিয়াতি, বিদ্যালয়ের পতাকা অবমাননাসহ ইতোপুর্বে ৬ বারসহ এনিয়ে তিনি ৭ বার সাময়িক বরখাস্ত হলেন। এর আগেও অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি নিজ মালিকানাভুক্ত করার মামলায় স্বস্ত্রীক কারাবাসের পর জমি ফেরত দিয়ে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেশরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির অভিযোগে এলাকায় বেশ আলোচিত। কোটি টাকার সম্পদের মালিক এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজনৈতিক মহলেও বেশ শক্তিধর। বিদ্যালয়ের অর্থসম্পদ লুট করে অঢেল সম্পদের মালিক বনেছেন বলে ডজন খানেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এখনও প্রায় ৫টি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে।
বরখাস্ত নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার কেশরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক শফিবুল ইসলাম ফৌজদারী মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন গ্রহণ করেছেন। এ মামলাটি বর্তমানে চলমান থাকায় সরকারী কর্মচারী আইন ২০১৮ এর ৩৯ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারায় বর্ণিত বিধান অনুসারে তিনি অবশ্যিক সাময়িক বরখাস্ত হন।
এছাড়াও মামলাটি নিষ্পত্তিতক সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় খাকবেন। প্রধান শিক্ষক এ আদেশ বাস্তবায়ন পুর্বক শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের সরকারি অংশের বেতন ভাতার বিলে স্বাক্ষর করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়।
২০১৮ সালে রাজশাহী মেজিষ্ট্রেট আদালত মোহনপুর এ মামলাটি করেছিলেন শিক্ষার্থী অভিভাবক আবদুল আজিজ।
২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ছিলেন, ধামিন নওগাঁ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং তার স্ত্রী ছিলেন প্রধান শিক্ষক। সে সময়ে তারা দুজন যোগসাজস করে প্রাথমিক বিদ্যালয় নামীয় জমি (জেএল নং ৩৬১) জালিয়াতী, মিথ্যা দলিল প্রনয়ণ, জাল দলিলকে খাটি দলিল দেখিয়ে নিজে দখল করেন।
আলোচিত এঘটনায় প্রধান শিক্ষকের আপন মামা সাবেক ইউপি সদস্য নায়েব আলী মন্ডল আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় শফিকুল ইসলাম স্ত্রীসহ দীর্ঘদিন কারাভোগে করেন। মহামান্য আদালতে বিদ্যালয়ের জমি জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি ফেরত দিয়ে স্বস্ত্রীক জামিন লাভ করেন।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের ৫টি বহুতল ব্যবসায়িক ভবনে রয়েছে শতাধিক দোকানপাট। যার অধিকাংশই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একক আধিপত্য বিস্তার করে ডকুমেন্টস ছাড়াই লাখ লাখ টাকা জামানত নিয়ে ভাড়া দিয়ে অর্থভোগ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এধরণের ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক দোকানের ভাড়াটিয়া নিজাম উদ্দিন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একমাত্র খেলার মাঠ ও জমি ম্যানেজিং কমেটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই ব্যাংকে মরগেজ দিয়ে ঋণ গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক।
সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি রুস্তম আলী প্রামাণিক অন্যের নিয়োগের টাকা খরচ করে এসব করে আসছেন। নিজের টাকা খরচ করা লাগলে এসব করতেন না। তবে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষ বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক আমাকে সাময়িক বরখান্ত করেছেন তা শুনেছি। এখন পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো নোটিশ পাইনি।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি রুস্তম আলী প্রামাণিক বলেন, প্রধান শিক্ষক একজন দূর্নীতিবাজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি একজন দুষিত মানুষ। কেশরহাট পৌর এলাকা শিক্ষাকেন্দ্রিক এলাকা। এখানে অনেক প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। কোনো প্রতিষ্ঠান অর্থ ক্যালেংকারি এবং জমি জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে চান না। ইনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে নিজ নামে লিখে নিয়েছিলেন। এ মামলায় স্ত্রীসহ তিনি দীর্ঝদিন হাজত খেটেছেন। তিনি স্কুলের টাকা, সম্পদ তসরুপ করেই চলেছেন। তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয় ভিত্তিক ২০টির মতো অভিযোগ ও মামলার কোনোটায় হাজত খেটেছেন, কোনোটায় জামিনে আছেন। আবার ৫/৬টি মামলা চলমান আছে। তাকে অপসরাসন করা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা।


প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৪ | সময়: ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ