ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, অর্ধেকই মোটরসাইকেলে

সানশাইন ডেস্ক: এবারের রোজার ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে ১৫ দিনে সড়কে ৩৯৯ দুর্ঘটনায় ৪০৭ জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৮ জন।
এর মধ্যে ১৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত ও ২৪০ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯.৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০.৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০.৩৭ শতাংশ। দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তথ্যে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটির হিসাবে, এবারের ঈদুল ফিতরের ১৫ দিনে সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মোট ৪১৯ দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ হাজার ৪২৪ জন। আলাদাভাবে রেলপথে ১৮ দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন। নৌপথের দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
গত বছরের রোজার ঈদের ১৫ দিনে সড়কে ৩০৪টি দুর্ঘটনায় ৩২৮ জনের প্রাণ গিয়েছিল, আহত হয়েছিলেন ৫৬৫ জন। সেই হিসাবে এবারের রোজার ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বড়েছে ৩১.২৫%। সেই সঙ্গে প্রাণহানি ২৪.০৮% এবং আহতের সংখ্যা বেড়েছে ১৪৭.৪৩%। ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনের দুর্ঘটনা ও হতাহতের হিসাব তুলে ধরেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ অনুয়ায়ী, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়নের ফলে যানবাহনে গতি বেড়েছে।
“দেশের সবকটি সড়ক ও মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মাসেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর ৭.৫% মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রকসংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। তাই বাস ও ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লোকজন ঈদে বাড়ি গেছে।”
দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে যাত্রী কল্যাণ সমিতি দেখেছে, মোট যানবাহনের ৪০.৫০% মোটরসাইকেল, ১৪.২৮% ট্রাক-পিকআপ-কভার্ড ভ্যান-লরি, ৬.৫০% কার-মাইক্রো জিপ, ৫.৯৬% নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ৬.১৪% অটোরিক্সা, ১২.১১% ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, এবং ১৪.৪৬% বাস দুর্ঘটনায় পড়েছে।
এর মধ্যে ২৬.৩১% মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৭.১১% পথচারীকে চাপা, ২২.৫৫% নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে, ০.৫০% ট্রেন-যানবাহনে সংঘর্ষ, ০.৫০% চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ৩% অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা হয়েছে। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “সড়ক, রেল ও নৌপথে উন্নয়নের ফলে যানবাহনের গতি বেড়েছে। তবে গতিকে নিরাপদ করতে আইনি কাঠামো, দক্ষ চালক ও মানসম্মত যানবাহনের অভাব রয়েছে।”
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল, মহাসড়কে রোড সাইন ও সড়কবাতি না থাকা, টার্নিং চিহ্ন না থাকা, সড়কে নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি ও ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো এসব দুর্ঘটনার কারণ।
এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা’, সড়কে আলোকসজ্জা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান, ধীরগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেন, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে সমিতি।
এছাড়াও ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা, সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ, উন্নতমানের বাস নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও রোড সেইফটি অডিট করা ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল করার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফরন্নেছা খান, ‘গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ’ আব্দুল হক, সমিতির সহসভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক ও প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ | সময়: ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ