কমে গেছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান: হাঁড় কাঁপানো শীতে জবুথবু প্রাণিকুল

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যে খুব বেশি কম ছিল না কিন্তু নয়। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ি রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রায় যে শীত অনুভুত হওয়ার কথা তার চেয়েও অনেক তীব্র শীত বিরাজ করছে প্রকৃতিতে। গরম কাপড়ও যেন মানছে না শীত। কনকনে হিমেল হাওয়ায় জবুথবু প্রাণিকুল। এমন শীত অনুভব হওয়ার কারণ তাপমাত্রার ব্যবধান কমেছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ি, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। কিন্তু পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে তবে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। এমনই তাপমাত্রা চলছে রাজশাহীতে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে।
বুধবার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান মাত্র ৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই তাপমাত্রার ব্যবধান ৫ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ার কারণে রাজশাহীতে হাঁড় কাঁপানো শীত অনুভুত হচ্ছে।
তীব্র শীত পড়ার প্রধান এ কারণটির পাশাপাশি শীত অনুভুত হওয়ার যেসব কারণ থাকে তার সবই এখন বিরাজ করছে প্রকৃতিতে।
নিয়ম অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। রাজশাহীতে যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে তা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও পড়ে না। কিন্তু শীতের আক্রমন দেখে মনে হচ্ছে যে প্রকৃতিতে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ি, দুই তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের কুয়াশা, হিমালয়ের বাতাস, বৃষ্টি ও শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে প্রকৃতিতে। যার কারণে শীতের তীব্রতা আরো বেশি বেড়েছে। এছাড়া ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস খুব ঠাণ্ডা হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘জেড স্ট্রিম’ বা প্রচণ্ড গতিবেগ সম্পন্ন বাতাস কখনো নিচে নেমে আসছে, কখনো ওপরে উঠে যাচ্ছে, যেটা ভাইব্রেট (কম্পন) হচ্ছে। অর্থাৎ ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাসের নিম্নমুখী বিচরণ হচ্ছে। এই নিম্নমুখী বিচরণও অনেক সময় শীতের অনুভূতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা কলেজ মোড় এলাকার শিক্ষক হুমায়ন কবির জানান, এ মৌসুমে হাড়ে কাঁপন ধরাচ্ছে শীত। কয়েকদিনের টানা শীতে মেহনতি মানুষদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠে কাজ করতে যেতে পারছেন না অনেকেই। এরপরও রুটি-রুজির প্রয়োজনে প্রতিদিন ভোরেই ঘর ছেড়ে বের হতে হয়। শীতের কারণে আয়-ইনকামও কমে গেছে।
কমে গেছে রিকশাচালকদের আয়ও। নগরীর কয়েরদাঁড়া এলাকার রিকশা গ্যারেজের মালিক রেদওয়ানুল হক জানান, তার গ্যারেজের অনেক রিকশা বসে আছে। চালকরা রিকশা বের করছেন না। এত শীতের মধ্যে মানুষ কাজ ছাড়া বের হতে চায় না। তাই অল্প আয় করে ভাড়া রিকশা নিয়ে বাইরে বের হয়ে খুব একটা লাভ হচ্ছে না তাদের।
যেসব কারণে বাংলাদেশে এ বছর শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে, সেগুলোর একটি হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা পড়া। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দীর্ঘ সময় ধরে ঘন কুয়াশা পড়তে দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর এই দীর্ঘ সময়ের কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণকাল কমে এসেছে। অর্থাৎ সূর্য বেশিক্ষণ আলো দিতে পারছে না। স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন থেকে চার ঘণ্টায় বলেন তিনি।
এতে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় দিনের ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। ফলে শীতও বেশি অনুভূত হচ্ছে। এ বছর দিনের তাপমাত্রা দুই থেকে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ১১ জানুয়ারির পর থেকে এটি বেশ কমে এসেছে।
এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশজুড়ে উচ্চচাপ বলয় তথা বাতাসের চাপ বেশি থাকার কারণে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শীতের ঠান্ডা বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় শীতের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
এমনিতেই গত কয়েকদিন ধরে শীত বেশ জেঁকে বসেছে। এর মধ্যে আবার শুরু হতে পারে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। শুক্রবার নাগাদ ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সাথে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে এই সময়ে তাপমাত্রা আরও কমে আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়া রাতে সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, যা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৪ | সময়: ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ