জাল সনদে চাকরি নেওয়া গোদাগাড়ীর ৩ শিক্ষক বেতন পেতে মরিয়া

গোদাগাড়ী প্রতিনিধি: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজে জালসনদ, মুঞ্জরীপৎ জালিয়াতি করে ৩ জন শিক্ষকের এমপিওভুক্তি করেছেন সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ রেজাউল করিম।
২০০৩ ও ২০০৪ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ রেজাউল করিম মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রভাবিত হয়ে সঙ্গীত বিভাগে শাহীন আক্তার ( ইনডেক্স নং ৩০৭৩১৪১), আরবী বিভাগে প্রভাষক মোঃ সাদিকুল ইসলাম ( ইনডেক্স নং ৩০১১২২০) ইন্সট্রাক্টর এসএম নাজমুস সাদাত (ইনডেক্স নং ৩০১১২২২) জাল সনদ ও মঞ্জুরীপত্র জালিয়াতি করে বেতনভাতার ব্যবস্থা করেন। রেজাউল করিম অবসর গ্রহনের পর ২০১৭ ইং সালের ২৪ অগষ্ট অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন মোঃ সেলীম রেজা।
এর পরপরই ওই তিন শিক্ষকের জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে এবং গর্ভনিং বডির সিদ্ধান্তক্রমে সভাপতি রাজশাহী জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, শিক্ষক নেতা শাহাদুল হক তাদের মুঞ্জরীপত্র জালিয়াতি ও নকল সনদের বিষয়টি লিখিতভাবে জানতে চান। কিন্তু তারা সঠিক জবাব দিতে না পারায় তাদের বেতন ভাতা স্থগিত রাখা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে তারা বেতন পেতে মরিয়া উঠেছে। বিভিন্ন দপ্তরে করছেন মিথ্যা অভিযোগ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। মুঞ্জরী নবায়ন বিহীন ৩ জন্য শিক্ষক ,জাল সনদধারী একজন শিক্ষকের এমপি ভুক্তির বিষয়টি রহস্য জনক। তারা এমপিও ভুক্তি হতে পারেন না।
গর্ভনিং বডির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের ব্যপারে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা যাচাই বাছাই করে দেখাছি কলেজ প্রশাসনের কোন অসঙ্গি আছে কি না। ওই কলেজের শিক্ষকদের অনিয়ম, দুর্নীতি, সনদ জালিয়াতির ব্যপারে এমপিও ভুক্তি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দায়ী নয়। তিনি আরও বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহীর কলেজ পরিদর্শক, আমাদের এ ধরনের চিঠি দিতে পরেন না। বিধিমোতাবেক অমরা ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
উল্লেখ্য মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহী কলেজ পরিদর্শক মোঃ এনামুল হক ( আইডি নং ০১৫২৫৮) স্মারক নং ১/কল/রাজ- ৪২৪/৭০৫ তারিখ ১৪/১২/২০২৩ ইং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মোসাঃ ফহিমা সুলতানাকে এক পত্র মারফত রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের চলমান গভর্ণিং বডির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করেন।
গত ১৪/০৯/ ২০১৭ ইং সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ হেলাল উদ্দিন তৎকালীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা অঞ্চল মিরপুর – ১, ঢাকার পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফকে কলেজের মুঞ্জরী নবায়ন জালিয়াতি করে সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ রেজাউল করিমের মাধ্যমে জালসনদধারী সঙ্গীত বিভাগের প্রভাষক শাহিন আক্তার, আরবী বিভাগের প্রভাষক মোঃ সাদিকুল ইসলাম ও ইন্সট্রাক্টর এসএম নাজমুস সাদাতের বিরুদ্ধে, ২০১৭ সালের ১৯ ও ২০ অক্টোবর সরজমিনে তদন্ত করেন প্রফেসার মোহাম্মদ ইউসুফ।
(স্মারকপত্র নং মাউশি, ঢাঅ/তদন্ত/২০১৭/১৫০) তিনি বিধিমোতাবেক তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষাভবনে সহঃ পরিচালক কলেজ – ৩ হেলাল উদ্দিনের নিকট জমাদেন কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের এমপিও শীট থেকে নাম কর্তন হয় নি।
এ ব্যপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাদের মঞ্জুরী নবায়ন জাতিয়াতি ও নকল সনদপত্রের বিষয়ে প্রমান পায় এবং তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। তিনি আরও বলেন, তাদের কোন ধরনের ছাড় দিবেন না।
রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সেলীম রেজা বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ রেজাউল করিম তিন জন শিক্ষকের মুঞ্জরী নবায়ন ছাড়াই নিয়োগ দেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ভূয়া, অফিসে নিয়োগ ও যোগদান পত্র নেই। তাদের নিয়োগ যোগদানের কোন রেজুলেশন নেই। তাদের ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, রাজশাহী, আঞ্চলিক অফিস, রাজশাহী, দুর্নীতির দমন অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি, তদন্ত হলেও সে তদন্ত রিপোট শিক্ষভবনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে হাওয়া হয়ে গেছে।
প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম, উৎপাদন ও বিপনন বিভাগের প্রভাষক আহাদুজ্জামান নাজিমের বিরুদ্ধে স্থায়ী বরখাস্তের জন্য আরবিটিশনে আবেদন করা হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
রাজশাহী কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবু হাসনাৎ মোঃ রফিকুল ইসলামের ( ৫৪১১) সাথে যোগাযোগ করা করা হলে তিনি বলেন, বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় দেরী হয়ে গেছে, আমি আরও একটি এধরনের বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমি অধ্যক্ষ সাহেবের সাথে কথা বলেছি আগামী বছর ১৫ থেকে ২০ জানুয়ারির মধ্যেই তদন্ত করে রিপোট দিব।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩ | সময়: ৭:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ