আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে পাকিস্তান

স্পোর্টস ডেস্ক: শাহিন শাহ আফ্রিদিকে স্কুপ শট খেলার চেষ্টায় পারলেন না ফারিদ আহমেদ। ফুল টস বলে স্টাম্প উড়ে গিয়ে পড়ল কয়েক হাত দূরে। উড়ে গেল যেন আফগানিস্তানও। অনায়াস জয়ে আফগানদের হোয়াইটওয়াশড করল পাকিস্তান। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে তারা উঠে গেল ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায়। কলম্বোতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের জয় ৫৯ রানে।
ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে পাকিস্তান করে ২৬৮ রান। প্রথম ৩০ ওভারে তারা তুলতে পারে স্রেফ ১০৩। পরের ২০ ওভারে যোগ করে ১৬৫ রান। ৭৯ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় সর্বোচ্চ ৬৭ রান করে ম্যাচের সেরা কিপার-ব্যাটসম্যান মোহাম্মাদ রিজওয়ান। শূন্য রানে সিরিজ শুরুর পর টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে ৮৬ বলে ৬০ রান করেন বাবর আজম। তার ইনিংসটি গড়া ৪টি চার ও একটি ছক্কায়। আঘা সালমান ৩১ বলে অপরাজিত ৩৮ ও মোহাম্মদ নাওয়াজ ২৫ বলে খেলেন ৩০ রানের ইনিংস।
জবাবে ৭৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া আফগানিস্তান কোনোমতে ছাড়াতে পারে দুইশ, অল আউট হয় তারা ২০৯ রানে। মূল ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে ব্যাট হাতে আলো ছড়ান রহস্য স্পিনার মুজিব উর রহমান। ৯ নম্বরে নেমে ৩৭ বলে ৫টি করে ছক্কা ও চারে ৬৪ রানের খুনে ইনিংস খেলেন তিনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ নম্বরে বা এর নিচে নেমে কোনো ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ স্কোর এটিই। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কিপার-ব্যাটসম্যান গাই ডি আলউইসের অপরাজিত ৫৯ ছিল আগের সেরা। মুজিব ফিফটি করেন এ দিন স্রেফ ২৬ বলে, আফগানিস্তানের হয়ে এই সংস্করণে যা দ্রুততম। ২০২১ সালে আবু ধাবিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে রাশিদ খানের ২৭ বলে ফিফটি ছিল আগের রেকর্ড।
৪২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সফলতম বোলার লেগ স্পিনার শাদাব খান। শাহিন, ফাহিম আশরাফ ও নাওয়াজের প্রাপ্তি ২টি করে। আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শনিবার পাকিস্তান টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে একাদশে চারটি পরিবর্তন এনে। দারুণ কয়েকটি বাউন্ডারিতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন ফাখার জামান। তবে ইনিংস টেনে নিতে পারেননি তিনি, ৩৩ বলে ৫ চারে করেন ২৭ রান।
প্রথম দুই ম্যাচে ফিফটি করা আরেক ওপেনার ইমাম-উল-হক এবার বিদায় নেন ৩০ বলে ১৩ রান করে। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকেই ফেরান সিরিজে প্রথম সুযোগ পাওয়া গুলবাদিন নাইব। তৃতীয় উইকেটে শতরানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন বাবর ও রিজওয়ান। শুরুতে মন্থর ব্যাটিংয়ে এগোন দুজনই। পরে বাড়ান গতি। ৩১ থেকে ৪০, এই ১০ ওভারে পাকিস্তান তোলে ৮৫ রান।
বাবরকে ফিরিয়ে ১৪৫ বলে ১১০ রানের জুটি ভাঙেন রাশিদ। দেড় বছর পর ওয়ানডে খেলার দিনে সাউদ শাকিল যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। যদিও পরে তাকে যোগ করা হয় এশিয়া কাপের দলে। আগের ম্যাচে দারুণ এক ইনিংস খেলে জয়ের নায়ক শাদাব খান এবার টিকতে পারেননি। সালমান ও নাওয়াজের দুটি কার্যকর ইনিংসে আড়াইশ ছাড়াতে পারে পাকিস্তান। রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় আফগানিস্তান। তাই জয়ের আশাও তারা জাগাতে পারেনি কখনোই।
পাওয়ার প্লেতে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানকে ফিরিয়ে দেন ফাহিম। সিরিজে প্রথম সুযোগ পেয়ে ৩৪ রান করতে ৬৬ বল খেলেন রিয়াজ হাসান। একই ওভারে রিয়াজ ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদির উইকেট নেন লেগ স্পিনার শাদাব। গুলবাদিন, মোহাম্মাদ নাবি ও রাশিদ দ্রুত বিদায় নিলে আফগানিস্তানের স্কোর হয়ে যায় ৭ উইকেটে ৯৭।
সেখান থেকেই মুজিবের ওই ইনিংস। ওয়ানডেতে নিজের আগের সেরা ১৮ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি পেলেন প্রথম ফিফটির স্বাদ। দলের পরাজয়ের ব্যবধান কমানো তার রেকর্ড গড়া ইনিংস থামে হিট উইকেট হয়ে। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সংস্করণে আফগানিস্তানের প্রথম জয়ের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হলো আরও। সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্রেফ ৫৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে ৩০০ রানের পুঁজি গড়ে জয়ের আশা জাগায় তারা, কিন্তু ২ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ২ ওভারে ২৭ রানের সমীকরণ মিলিয়ে ফেলে পাকিস্তান।
সিরিজের সব ম্যাচ জিতে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার পাশাপাশি এশিয়া কাপের আগে পাকিস্তানের প্রস্তুতিটাও ভালো হলো। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসরে আগামী বুধবার প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে খেলবেন বাবর-রিজওয়ানরা।


প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৩ | সময়: ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ