শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
জুলইকরাম ইবতিদা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনইউ) সার্ভার ডাউনের কারণে ভর্তি আবেদন করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে রাজশাহীর হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ১২ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত মাস্টার্সের ভর্তির জন্য আবেদন শুরু হলেও সার্ভার ডাউন থাকায় আবেদন করতে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। মঙ্গলবার ছিল আবেদনের শেষ দিন।
তারা বলছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়নের পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজ অনলাইনে করা হয়। কয়েক বছর ধরে অনলাইনে সব কার্যক্রম শুরু হলেও প্রতিবারই ফরম পূরণ, রেজাল্ট দেখতে সমস্যায় পড়তে হয়। বিভিন্ন অনলাইনের দোকানে দোকানে ঘুরে এসব কাজ করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। তারা দায় দিচ্ছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে।
স্থানীয় ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্নকারী দোকানীদের অভিযোগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার সব সময় দুর্বল। এবার তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। শুধু ভর্তির ফরম পূরণ নয় রেজাল্ট দেওয়ার দিন, ফরম ফিল আপ ও রেজিস্ট্রেশনের সময়ও এ সমস্যা হয়। এটা দুর হওয়া দরকার।
পাঁচ বছর ধরে ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্নকারী হিসেবে কাজ করেন আল আমিন হোসেন। তিনি বলেন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের সার্ভার গত কয়েকদিন ধরে খুব ধীর গতিতে কাজ করছে। গত কালকে সার্ভারে কোনো কাজ করায় যায়নি। আজকে (মঙ্গলবার) মোটামুটি কাজ করা যাচ্ছে। আবার মাঝে ডাউন হয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন সার্ভারে কাজ না করায় শেষ দিনে অনেক চাপ বেড়েছে। শেষ দিন হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের চাপ বেশি।
আরেক দোকানী আবুল কালাম আযাদ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার থেকে ভর্তি ফরম ডাউন লোড করা যাচ্ছে না। ওয়েবসাইটে থাকা হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করেও সমস্যা সমাধানের পথ বের করা যায়নি। এতে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সারাদিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করাই যায় না। মাঝে-মধ্যে প্রবেশ করা গেলেও আবেদনের শুরুতেই, বা মাঝামাঝি বা শেষ পর্যায়ে গিয়ে সফল হওয়া যায় না।
নওগাঁ জেলার সাপাহার থানা থেকে এসেছেন আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, আমি গত ২ দিন আগে এসেছি। ২ দিন ধরে আমি ফরম পূরণের চেষ্টা করছি, সার্ভারের সমস্যার কারণে পুরণ করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছি। কলেজ থেকেও কোনো প্রকার সাহায্য পাইনি। যেজন্য আমাদের বাহির থেকে ফরম পুরণ করতে হচ্ছে। গত কয়েক দিন সার্ভারে সমস্যা থাকায় আজকে দোকান গুলোতেও অনেক ভীড়। আর তারা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। যার ফলে আমাদের অনেক অর্থ ও সময় নষ্ট হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে ৩ দিন আগে এসেছেন পারভেজ আলি। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এই বছর ফরম পুরণের সময় অনেক কম। জাতীয় ছুটি ১৪ ডিসেম্বর ১৬ ডিসেম্বর। তাছাড়া সরকারি ছুটি তো আছেই। এসব কারণে ফরম পুরণে একটু বেগ পেতে হচ্ছে এবং সার্ভারের সমস্যা থাকায় কাজটা আরও বেশি কঠিন হয়েছে।
অপর এক শিক্ষার্থী মাইশা মাহি বলেন, আমি বাড়িতেই ফরম পুরণ করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সার্ভারের সমস্যা থাকাই আমি এইটা বাসাই করতে পারিনি। যার জন্যে আজকে আমাকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ফরম পুরণ করতে হয়েছে। এ সকল সমস্যা-সমাধানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সংস্কার করাটা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আগামীতে ফরম পুরণের সময় বাড়ানো হলে ভালো হয়। এছাড়াএ সকল সমস্যার সমাধান হলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনেক উপকার হত বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাঃ আব্দুল খালেক বলেন, এইটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভরের সমস্যা হচ্ছে, যদি তারা দেখে যে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ফরম জমা দিতে পারেনি তাহলে তারা ফরম জমা দেয়ার তারিখ বাড়াতে পারে। এটি তাদের সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। এখানে যদি আমাদের কলেজের ভর্তি কমিটি যদি কোনো অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকে বা ছাত্রদের হয়রানির কারণ হয়, তবে সেটি প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।