ছাত্রলীগ নেতার পা ভেঙে দেয়ার খবরে হার্ট এ্যাটাকে পিতার মৃত্যু

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনকে বেধড়ক পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেওয়া সহ আরও ৬-৭ জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে দাশুড়িয়া ডিগ্রী অনার্স কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও তার সমর্থকরা।
বুধবার বিকালে দাশুড়িয়া ইউনিয়নের সরাইকান্দি এলাকার কোবাদ ফিলিং স্টেশনে সামনে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ছেলের পা ভেঙ্গে গুরুতর আহত হওয়ার খবর পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর হোসেনের পিতা আকমল হোসেন হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় দরগাহ্ পাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে জানাযা শেষে ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর হোসেনের পিতা আকমল হোসেন এর দাফন সম্পন্ন করা হয়। সেখানে গুরুতর আহত ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর হোসেনকে বিশেষ ব্যবস্থায় এ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদীতে আনা হয় পিতাকে শেষ বারের মত এক নজর দেখার জন্য। শত শত মানুষের উপস্থিতিতে ভারী হয়ে উঠে এলাকার পরিবেশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বুধবার বিকালে মুলাডুলি মুক্ত মঞ্চে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে আলমগীর ও তার কর্মী-সমর্থকরা দাশুড়িয়া দিয়ে মুলাডুলি যাচ্ছিল। এ সময় উল্লেখিত স্থানে পৌঁছানো মাত্র দাশুড়িয়া ডিগ্রী অনার্স কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে আলমগীরের ডান পা, ছাত্রলীগ কর্মী কাওসার হোসেন এর ডান পা ও মুলাডুলি ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য মিজানুর রহমান মিন্টুর এক হাত ভেঙে যায় এবং ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মী গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। আলমগীর সহ দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মল্লিক মিলন মাহমুদ তন্ময় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মুলাডুলি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ আয়োজিত বর্ধিত সভায় আমি সহ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা অতিথি ছিলেন। সেখানে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্ব করার কথা ছিল। কিন্তু বর্ধিত সভায় যোগ দেয়ার প্রাক্কালে দাশুড়িয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও তার অনুসারীরা আলমগীরের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
আলমগীরের এক পা ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে তার পিতা স্টোক করে মারা যায়। আমরা উপজেলা ছাত্রলীগ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তন্ময় আরও বলেন, পাবনা জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ জানানো হবে।
মুলাডলি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিল্টন হোসেন জানান, আহত আলমগীরকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থান করছি। তার ডান পা ভেঙ্গে গেছে। আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত। তাদের চিকিৎসা চলছে।
মুলাডুলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন মিঠু জানান, আলমগীর ও ফাহিম দুজনই আমার নিকট আত্মীয়। কলেজ সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল বলে শুনেছি। সেই দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
মুলাডলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম মালিথা জানান, ঘটনাটি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে। ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে এ ধরনের কর্মকান্ড কোনভাবে কাম্য নয়। আহত বেশ কয়েকজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে শুনেছি। এদিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত দাশুড়িয়া ডিগ্রী অনার্স কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আহমেদের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনা ঐ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বাড়তি পুলিশ মোতায়ন করা হয়। তবে এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর