স্ত্রীকান্ডে আক্কেলপুরের সেই ইউএনও ওএসডি

আক্কেলপুর প্রতিনিধি: স্ত্রী কান্ডে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলামকে বদলী করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওএসডি হিসেবে বদলি করা হয়।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই কর্মকর্তাকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তার নামের পাশে বর্ণিত পদে বদলি পূর্বক নিয়োগ করা হলো। জনস্বার্থে জারীকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এর আগে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জিনাত আরা খাতুন কলি তার একটি শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে স্ত্রীর মর্যাদার দাবি করে ইউএনও কার্যালয়ের সামনের সড়কে বসে অনশন করেছেন।
তার দ্বিতীয় স্ত্রী জিনাত আরা খাতুন কলির দাবি, তিনি ইউএনও আরিফুল ইসলামের বিবাহিতা স্ত্রী। তার একটি শিশু ছেলে সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তিনি দিনাজপুর কলেজিয়েট গার্লস্ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
বুধবার বিকেলে ইউএনওর কার্যালয়ের সামনের রাস্তার মাঝে বসে পড়েন জিনাত আরা খাতুন কলি। ইউএনওর স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে শহরের প্রধান সড়কে সব যানবাহন অবরোধ করেন তিনি।
জিনাত আরা খাতুন জানান, আক্কেলপুরের বর্তমান ইউএনও আরিফুল ইসলামের আগে দিনাজপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন একটি জমি খারিজ করতে গিয়ে তার (আরিফুল) সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
পরে সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রথম স্ত্রী থাকার বিষয়টি গোপন করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রায় ২০ লাখ টাকা দেন মোহরে রেজিস্ট্রি মূলে রংপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি রেস্ট হাউসে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
জিনাত আরা অভিযোগ করেন, বিবাহের বিষয়টি প্রথম থেকেই কৌশলে গোপন করেন আরিফুল। এমনকি তিনি গর্ভবতী হলেও গর্ভপাতে বাধ্য করেন তার স্বামী। অবশ্য পরে তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। তবে পরে জিনাত আরা খাতুনকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান আরিফুল।
জিনাত আরা জানান, স্ত্রীর মর্যাদা পেতে বুধবার দুপুরে আক্কেলপুরের বর্তমান ইউএনও মো. আরিফুল ইসলামের বাংলোতে সাথে দেখা করার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে আসা পরিবারের সদস্যদের হেনস্তার পর বাইরে বের করে দেন নিরাপত্তা কর্মী আনসার সদস্যরা। তখন তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ইউএনও। পরে জিনাত আরাকে তালাক দেন তিনি। এর কারণে বিকেলে কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কের যানবাহন আটকে অনশন শুরু করেন। বিষটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
জিনাত আরার ভাই মুক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আরিফুল ইসলাম আমার বোনকে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে তিনি বিষয়টি গোপন করেন। তিনি তার শিশু সন্তান এবং স্ত্রীকে মর্যাদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। আমার বোনের স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে এখানে এলে তিনি আমাদের হেনস্তা করেছেন।’
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়।
এর আগে অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এটি প্রথম আমি আপনার কাছে শুনলাম। আমাকে ব্ল্যাক মেইল করে ট্র্যাপে ফেলার একটি বিষয় ছিল। তাকে (জিনাত আরা) তালাক দেওয়া হয়েছে। আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে। এটি একটি পারিবারিক বিষয়।’
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, আক্কেলপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। সেই সাথে নতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলমকে আক্কেলপুরে পদায়ন করা হয়েছে’।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ | সময়: ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর