আশ্বিনের বন্যায় ডুবছে নিম্নাঞ্চল

মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা: আশ্বিনের অসময়ের ভারী বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ী ঢলে বাগমারার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বাল্পকালীন বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই বন্যায় কৃষকের নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেত ও বিলের ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
কৃষক আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া অনেক কৃষকের মরিচের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় বাজারে এক লাফে মরিচের দাম দুইশ টাকা ছড়িয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কালের বৃষ্টিপাত পাহাড়ী ঢল ও ভারতের গজালডোবায় গেট খুলে দেওয়ায় উজান থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে ধেয়ে আসছে তিস্তার পানি। এই তিস্তার শাখা নদী আত্রাই। আর আত্রাইয়ের শাখা নদী বাগমারার ফকিরানী ও বারনই নাটোরের সিংড়া হয়ে মিশেছে যমুনায়। যে কারণে আত্রাই নদীর পানি বাড়ার কারণে বেড়েছে বাগমারার ফকিরানি ও বারনই নদীর পানি। এভাবে হাটাৎ বন্যার পানি বাড়ায় এই নদী সংলগ্ন বিলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে খালবিল গুলো প্লাবিত হওয়ায় সেখানে দেশি মাছের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সুযোগে সাধারন জেলে ও মৌসুমী জেলেরা মাছ ধরার দেশীয় বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে মাছ শিকারে মেতে ওঠেছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, যে হারে নদীর পানি বেড়েছে, তাতে এই বন্যায় বিল এলাকার নিম্নাঞ্চলের লোকজনের ঘরবাড়ি ডুবে যেত। কিন্তু এবার ফকিরানী ও বারনই নদীর প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার খনন করার কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকা বিলগুলো প্লাবিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে নদীর স্রোত। তাই দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে।
এদিকে আকর্ষিক বন্যার কারণে বাগমারার বেশ কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে অনেক কৃষক বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে সবজি চাষীদের দূর্ভোগের শেষ নেই। বাজারে সবজির সরবরাহ কম থাকায় কৃষকরা ভালোই সবজির দাম পাচ্ছিল। এরিমধ্যে তাদের সেই সবজির ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার আশার গুড়েবালি হতে চলেছে।
ভবানীগঞ্জ পৌরসভার কসবা মহল্লার কৃষক আবেদ আলী জানান, তিনি এবার পুঁশাক, ঢেঁরশ ও পটল চাষ করেছেন। জমিগুলো নদী সংলগ্ন হওয়ায় সেখানে পানি ওঠতে শুরু করেছে। ফলে তিনি অপুষ্ট পটল ও ঢেঁরশ বাজারে এনে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কারণ বন্যা আর কিছু বাড়লে তার জমির ওই সবজি গুলো সব তলিয়ে যাবে।
ফকিরানী নদী খনন করায় সেই নদীর মাটি ভরাট দিয়ে নদী সংলগ্ন এলাকায় কলা ও বিভিন্ন জাতের আমের বাগান করেছেন ভবানীগঞ্জের ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ। তিনি প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে ওই বাগান গড়ে তুলেছেন।
বর্তমানে নদীর পানি উপছিয়ে আব্দুল মজিদের বাগানে প্রবেশ করায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, ফকিরানী নদীর পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তার ইউনিয়ন সংলগ্ন নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড শক্ত বাঁধ নিমাণ করায় এবং নদী খননের কারণে গ্রামগুলো এখন ঝুকিমুক্ত রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল রাজ্জাক জানান, প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে আকর্ষিক এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। খননকৃত নদী এখন অনেক প্রশস্থ ও গভীর। ফলে দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে। আমরা কৃষকদের সাথে সার্বক্ষনিত যোগাযোগ বজায় রাখছি। স্থানীয় কৃষকরা এবার ব্রি ধান ৫১-৫২ এবং বিআর-২২ সহ বিভিন্ন বন্যা সহনীয় জাতের ধান আবাদ করেছেন।
ধানগুলো পানিতে ডুবে ২০-২২ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। আমরা কৃষকদের এসব বন্যা সহনীয় জাতের ধান আবাদ করতে উৎসাহিত করছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সুফিয়ান জানান, বন্যা পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সাথেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ চলছে।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩ | সময়: ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ