বাঘায় উন্নয়নে বদলে গেছে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতের চিত্র

নুরুজ্জামান, বাঘা: রাজশাহীর বাঘায় বর্তমান সরকারের ১৫ বছরে স্বাস্থ্য ও কৃষি বিভাগ থেকে নানামুখি সেবা প্রদানের কারণে অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। এই দুই খাতে বর্তমান সরকারের পর্যাপ্ত ভর্তুকী আর নানামুখি পদক্ষেপ-সহ কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ডাক্তারদের শতভাগ উপস্থিতি এবং উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠ পরিদর্শনের কারনে অত্র এলাকার মানুষ কৃষি খাতে নানা পরামর্ম পাওয়া সহ স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হরেক রকম পরীক্ষা (টেস্ট) ও অপারেশন (ওটি) চালু হওয়ায় সকল প্রকার সেবা পাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন মনে করছেন, চারঘাট-বাঘার সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলমের সার্বিক প্রচেষ্টার কারনে এ দুই বিভাগ থেকে মানুষ শতভাগ সেবা পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘায় দুটি পৌরসভা এবং সাতটি ইউনিয়ন মিলে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি আবাদ হচ্ছে। আর কৃষি পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ।
এখানকার প্রধান অর্থকারী ফসলের মধ্যে অন্যতম আম, খেজুরের গুড়, ধান, পাট, আখ এবং আলু-পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। এর সাথে নতুন ভাবে যুক্ত হয়েছে পলিনেট হাউজ এর মাধ্যমে শীতের সবজি গরমে এবং গরমের সবজি শীতে পাওয়ার সুযোগ।
এ ছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এখানে পাওয়া যাচ্ছে ক্যাপসিক্যাপ মরিচ, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, চিয়াসিট, ড্রাগন ফল এবং উন্নত প্রযুক্তি বিনা ধান ২৫ সহ হরেক রকম বিদেশী ফল।
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ড. আসাদুজ্জামান জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীতকরন হয়েছে, নতুন ওপিডি বিল্ডিং নির্মাণ ও স্বাস্থ্য সেবাকে গতিশীল করতে প্রথম শ্রেণীর অফিসার এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নতুন কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়েছে।
নির্মাণ করা হয়েছে একটি মসজিদ, চালু হয়েছে ২১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক, নতুন বর্জ্য নিষ্কাশন পিট নির্মাণ, এনসিডি কর্ণার স্থাপন, পাবিলিক টয়লেট, আই-ভিশন সেন্টার স্থাপন, অপারেশন থিয়েটার স্থাপন, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন স্থাপন, আলট্রাসাউন্ড মেশিন স্থাপন, আধুনিক মেশিন সমন্বিত ডেন্টাল ইউনিট স্থাপন, ৮টি পরিবার পরিকল্পনা উপকেন্দ্র সহ আড়ানী পৌর এলাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নিজেস্ব অর্থায়নে কেনা জায়গায় গড়ে উঠেছে মা ও শিশু হাসপাতাল। এর ফলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে আর শহর মুখী হচ্ছে না। এ জন্য তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কৃষি ক্ষেত্রে নানা প্রকার সুযোগ-সুবিধাসহ সরকারি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে উপজেলার প্রায় তিন হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে আউস প্রনোদনার আওতায় উন্নত মানের নেরিকা বীজ, সার নিড়ানী খরচ ও সেচ সহায়তা দেয়া হয়েছে। সেই সাথে এলাকা ভিত্তিক ৩০টি পাওয়ার টিলারসহ আম গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করার জন্য বর্তমান সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ শাহরিয়ার আলমের পক্ষ থেকে ১ শ টি স্প্রে ম্যাশিন সরবরাহ করা হয়।
তিনি বলেন, এ উপজেলায় ২০ জন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নিরলস ভাবে বিভিন্ন ফসলের নতুন-নতুন প্রযুক্তি দ্বারা সরকারের উন্নয়নের ধারা অবহত রেখেছেন। সেই সাথে পানির স্তর সংরক্ষণের জন্য তাল ও খেজুর গাছ রোপন করাসহ মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার্থে কৃষকদের পরামর্শের মাধ্যমে জৈবসার উৎপাদন অব্যহত আছে।
তিনি আরো বলেন, এখানকার আম দেশ বিখ্যাত। গত ৭-৮ বছর থেকে হরট্রেক্্র ফাউন্ডেশন সহ বে-সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাঘায় উৎপাদিত আম যুক্তরাজ্যে, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল হংকং ও ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত বছর থেকে আমের পাশা-পাশি পেয়ারা ও বরই রপ্তানী শুরু হয়েছে। আর এ গুলোর সবই সম্ভব হয়েছে চারঘাট-বাঘার অবিভাবক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কারনে। এজন্য তিনি মন্ত্রী মহাদ্বয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাঘার আমোদপুর গ্রামের কৃষক মহাসিন আলী বলেন, আমরা যে কোন ধরনের কৃষি সেবা চাওয়া মাত্রই তা পেয়ে থাকি। ফসলে কখন কোন বিষ প্রয়োগ করতে হবে, কখন হবে না, এছাড়াও পোকা মাকড়ের আক্রমন হলে কোন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন তার সবটাই আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ পেয়ে থাকি। এর পাশা-পাশি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও পুর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন উন্নত চিকিৎসা ও ঔষধ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই সব উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপি ও বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকেন। মাঝে মধ্যে মন্ত্রী এলাকায় আসলে আমাদের সমস্যা কথা শুনেন এবং সেটি সমাধানের জন্য সরকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
একই কথা বলেন, বারখাদিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ, বাউসার শফিকুল ইসলাম ও বলিহারের অমৃত কুমার। তারা আশাবাদী, সরকারের ধারাবাহিক উন্ননের কথা চিন্তা করে এই জনপদের মানুষ আবাও নৌকাকে বিজয়ী করবেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম বলেন, আমাদের সরকার কৃষক বান্ধব সরকার। আমরা মনে করি কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এ কারণে কৃষিখাতে অনেক ভর্তুকি দিয়ে থাকি। কারণ কৃষি এ দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। বর্তমানে দেশে জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অর্জিত হয় কৃষি খাত থেকে। তার চেয়েও বড় কথা কৃষি এ দেশের জনমানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদানের প্রধানতম এবং অন্যতম উৎস।
এ দেশের বিপুল জনসংখ্যার অধিকতর কর্মসংস্থানও হয়ে থাকে কৃষিকে অবলম্বন করে। ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করণ, জীবনযাত্রার মানউন্নন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে, কৃষি খাতে যে অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আমার দেখা মতে, বর্তমানে আমার নির্বাচনী এলাকা বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে অনেক শিক্ষত তরুণ নিজেকে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত করেছেন। এরফলে একসময় যেসকল ফল রাজধানী ঢাকা কিংবা বিদেশে গিয়ে পাওয়া যেতো, সেগুলো এখন বাঘায় পাওয়া যায়। ধরে নিতে হবে এটিও বর্তমান সরকারের কৃষি ভাবনার এক বাস্তব প্রতিফলন।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩ | সময়: ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ