সর্বশেষ সংবাদ :

এবার চিনি রপ্তানি বন্ধ করবে ভারত

সানশাইন ডেস্ক: খরায় উৎপাদনে বড় ধরনের ধাক্কায় নিজেদের বাজার সামলাতে চিনি রপ্তানি বন্ধ করতে যাচ্ছে ভারত; আগামী অক্টোবরে যা কার্যকর হওয়ার কথা জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। বুধবার তিনটি সরকারি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন মৌসুম থেকে চিনি উৎপাদনকারী কারখানাগুলোকে রপ্তানি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে অল্প কিছু দিনের মধ্যে চাল চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং পেঁয়াজে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর চিনি নিয়ে এ সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি রপ্তানিকারক দেশটি। ভারত সব থেকে বেশি চিনি উৎপাদন করলেও ভোক্তা হিসেবেও তারা দ্বিতীয় অবস্থানে। আর রপ্তানিতে ব্রাজিলের পরই রয়েছে দেশটি।
রয়টার্স বলছে, ভারতের বাজারে খুচরায় চিনির দাম গত সপ্তাহে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। দাম সহনীয় রাখতে সরকার অগাস্টে চিনি উৎপাদনকারী কারখানাগুলোকে অতিরিক্ত ২ লাখ টন বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। এল নিনোর প্রভাবে বৃষ্টির অভাবে দেশটির আখ উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোতে এবার ফলন অনেক হয়েছে। নতুন ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ ৩ কোটি ১৭ লাখ টন হওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে।
জুলাই ও অগাস্টের বড় সময়জুড়ে বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এল নিনোর প্রভাবে সাত দশকে এবার সবচেয়ে বেশি খরার মুখোমুখি হয়েছে দেশটি। চলতি বছরের শেষ দিকে তা আরও প্রকট হওয়ার শঙ্কার কথা বলেছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস। এতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে যাতে তেঁতে উঠছে মূল্যস্ফীতি। ভারতে গত জুলাইতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ হয়েছে, যা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের মাসে এ হার ছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এ বছর শেষ দিকের সাধারণ নির্বাচনের আগে পণ্যমূল্যের দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের মাধ্যমে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় দেশটির সরকার। বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি রপ্তানিকারক দেশ ভারতের নিষেধাজ্ঞা ইতোমধ্যে চড়তে থাকা বিশ্ব বাজারেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কার কথা লিখেছে রয়টার্স।
আন্তর্জাতিক চিনির বাজারে দেশটির অনুপস্থিতি নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনের ‘বেঞ্চমার্ক’ দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখবে; যেখানে ইতোমধ্যে দাম কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ভারতের এ ঘোষণা বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের বাজারে মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করবে। কেননা চিনি উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলো থেকে সরবরাহ কমার কারণে ভারতের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল বিশ্ব বাজার।
নাম প্রকাশে এখতিয়ার না থাকা অনিচ্ছুক সরকারি এক কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স লিখেছে, “প্রাথমিকভাবে আমাদের মূল মনোযোগ স্থানীয় চিনির চাহিদা মেটানো এবং উদ্বৃত্ত আখ থেকে ইথানল তৈরি করা। “যে কারণে নতুন মৌসুমে রপ্তানি কোটার জন্য পর্যাপ্ত চিনি থাকবে না।“ এ বছর সেপ্টেম্বরে শেষ হতে যাওয়া মৌসুমে কারখানাগুলোকে ৬১ লাখ টন চিনি রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। তবে গত মৌসুমে রেকর্ড এক কোটি ১১ লাখ টন চিনি বিক্রি করেছিল ভারত।
এর আগে ২০১৬ সালে রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে চিনিতে ২০ শতাংশ শুল্ক বসায় দেশটি। রয়টার্স আবহাওয়া দফতরের তথ্যের বরাতে লিখেছে, ভারতের শীর্ষ আখ উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকের জেলাগুলোতে মৌসুমি বৃষ্টিপাত ৫০ শতাংশ কম হয়েছে। এসব জেলা থেকে দেশটির মোট চিনির অর্ধেক যোগান দেওয়া হয়। ২০২২-২৩ বছরে ইথানলের জন্য ৪৫ লাখ টন চিনি বাদ দিয়েও তিন কোটি ৬৫ লাখ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্য ধরেছিল ভারত, যা আগের মৌসুমের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি।


প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৩ | সময়: ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ