কাফন পরে রাজশাহী চিনিকলের সাবেক শ্রমিকদের মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী চিনিকলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলাকালে কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন চিনিকলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। তারা দাবি করছেন তাদের গ্র্যাচুইটির টাকা।
শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী চিনিকলের ২০২৩-২৪ আখমাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন এভাবেই পাওনা টাকা দাবি করেন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকেরা।
তাঁরা জানান, অবসর গ্রহণের পর সাত-আট বছর ধরে তারা গ্র্যাচুইটির টাকা পাচ্ছেন না। এতে তাদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন।
বর্তমানে রাজশাহী চিনিকলের অবসরে যাওয়া ৩২০ জন শ্রমিক কর্মচারী গ্র্যাচুইটির প্রায় ৩০ কোটি টাকা পাবেন। একেকজনের পাওনা ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। সাত-আট বছর ধরে তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে একবার ৫০ হাজার ও একবার ৩০ হাজার টাকা করে দিয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। তারা সমস্ত টাকা একসঙ্গেই পরিশোধের দাবি জানাচ্ছেন।
মানববন্ধনে ছোট্ট নাতিকে নিয়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মিনা বেগম। তিনি বলেন, স্বামী মো. আলী বাচ্চু চিনিকলের মৌসুমি করণিক ছিলেন। অবসর নিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। কিন্তু গ্র্যাচুইটির টাকা পাওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে নানা অসুখে ভুগে বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা গেছেন। তারপরও তারা টাকা পাওয়া হয়নি। টাকা পেলে স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারতেন।
অবসরে যাওয়া জ্যেষ্ঠ করণিক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি অবসর নিয়েছি ২০২০ সালে। আমিও গ্র্যাচুইটির টাকা পাইনি। দুইবারে ৮০ হাজার টাকা পেলেও তা কাজে লাগানো যায়নি। আমরা সমস্ত টাকা একসঙ্গে চাই। এই টাকা কোথাও বিনিয়োগ করে শেষ বয়সে সংসারটা চালাতে চাই। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, দ্রুতই যেন আমাদের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’
সেন্টার ইনচার্জ পদ থেকে ২০২১ সালে অবসরে যাওয়া শ্রমিক বশির উদ্দিন বলেন, ‘শ্রমিকদের ঘরে এখন চাল নেই। তাই রান্নার জন্য চুলো জ্বলছে না। চাল কেনার টাকাও নেই। শ্রমিকেরা অনাহারে দিন পার করছে। অথচ তাদের পাওনা টাকা তারা পাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে পারে না।’ কর্মসূচি থেকে তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
শ্রমিকদের এই কর্মসূচি যখন চলছিল তখন পাশেই হচ্ছিল আখমাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (অর্থ) খোন্দকার আজিম আহমেদ।
এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার। অনুষ্ঠানে ছিলেন হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেবর আলীসহ অন্যান্য অতিথিরাও। পরে তারা আখমাড়াই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটির টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (অর্থ) খোন্দকার আজিম আহমেদ জানান, তিনি সবই দেখেছেন। যত দ্রুত শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করা যায় তা তিনি চেষ্টা করবেন।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৩ | সময়: ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ