কেশরহাট বিদ্যালয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ

কেশরহাট প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধের ঘটনায় দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুইজন আহত হয়েছে। এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। বুধবার দুপুরে স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে এঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের ঘটনার একাধিক ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিস্ট্রিক্ট স্পেশাল ব্রাঞ্চের দুই কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এসময় তারা হামলাকারীদের হাত থেকে একজনকে রক্ষা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবীতে বুধবার সকালে মহাসড়কে মানবন্ধনের আয়োজন করেন কেশরহাট বাজার বণিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজি হাবিবুর রহমান মিঠু। মানববন্ধনবন্ধন শেষে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরে কেশরহাট বাজারের মাছ বাজারে পৃথক আরেকটি সংঘর্ষের খবরে পুলিশ সেখানে চলে যায়।
এসময় কয়েকজন বহিরাগত লোকজন ঝাঁকি দিয়ে বিদ্যালয়ে ঢুকে তারা রুমে তালা দিয়ে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখেন। ঘটনাস্থলে বিদ্যালয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে চিৎকার চেঁচামেচি ও ছুটাছুটি শুরু করে।
এখবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে ছুটে এসে প্রতিবাদ করলে মারপিটে মিঠু কাজির লোকজনের হামলায় কেশরহাট পৌর যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মহসিন আলী গুরুতর আহত হন।
এরপর মহসিন আলীর আরো দুই ভাইসহ এসে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রুমে মারপিটে কাজি হাববুর রহমান মিঠুও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় বিদ্যালয় চত্বর অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনায় আহত মহসিন আলী এবং কাজি হাবিবুর রহমান বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) চিকিৎসাধিন রয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে নিরাপদে পাঠান। ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিঠু কাজির চাচা শরিফুল কাজি, বড় ভাই মাহাবুর কাজি এবং শাহাবুর কাজিকে থানায় হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত থানায় কোন পক্ষের লিখিত অভিযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, হাবিবুর রহমান মিঠু আমার অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন করছিল। সেখান থেকে সে লোকজন লোকজন নিয়ে হঠাৎ করে আমার কক্ষে ঢুকে গালিগালাজ করে আমাকে রুমের ভেতরে রেখে গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তারা মারামারিতে জড়িয়ে যায়। এসময় আমার শিক্ষার্থীরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি তারা কেন ঘটিয়েছে তা আমি জানিনা।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কেশরহাট পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র রুন্তম আলী প্রামাণিক বলেন, প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তাদের অভ্যন্তরিন কোনো বিষয় থাকতে পারে তাই বলে স্কুলভরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলা অবস্থায় কাজি হাবিবুর রহমান মিঠু লোকজন নিয়ে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করা খুব অন্যায় করেছে। তাদের তান্ডবের সময় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ের এধরণের ঘটনায় উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে জরুরী সভার আহব্বান করা হয়েছে। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জানতে চাইলে মোহনপুর থানার উপ-পরিদর্শক ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, হাবিবুর কাজি মানববন্ধন করছিলেন পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে অন্য একটি ঘটনায় চলে যায়। এসময় তারা বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষকের রুমে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে। এতে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মহসিন নামের একজন আহত হন। পরে তার ভাই ভাতিজাদের মারপিটে মিঠু কাজিও আহত হন। ওসিস্যার ঢাকায় ছিলেন তিনি সবেমাত্র ফিরেছেন। স্যারের নির্দেশ পেলে তদন্ত অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে।


প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৩ | সময়: ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ