আওয়ামী লীগের রাখঢাক নেই: শেখ হাসিনা

সানশাইন ডেস্ক: জনগণের জন্য কাজ করায় আওয়ামী লীগকে কোনও তথ্য গোপন করতে হয় না বলে মন্তব্য করেছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগের কোনও রাখঢাক (গোপনীয়) কিছু নেই। কোনও তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে, সেই চিন্তা আমাদের নেই। আমরা যা করব-সম্পূর্ণভাবে জনগণকে জানিয়ে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থেকেই করব। জনগণের কল্যাণ করাটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবন ও তথ্য কমিশন ভবন উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) কমপ্লেক্সেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বলে জানিয়েছে বাসস। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে তার সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তথ্য চাওয়া এবং তথ্য পাওয়া মানুষের অধিকার। সেই অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি এবং এখন মানুষ কোনও তথ্য চাইলে তা পেতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে তথ্য অধিকার আইন পাস করে এবং এর আওতায় তথ্য কমিশন গঠন করে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয় এবং কমিশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরাই বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি ওয়ার্ল্ড ও সংসদ টেলিভিশনের পাশাপাশি ৪৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, ২২টি এফএম রেডিও ও ৩২টি কমিউনিটি রেডিও, ১৪টি আইপি টিভিসহ অসংখ্য সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টালের অনুমোদন দিয়েছি।
“আমরা সাংবাদিকদের কল্যাণে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ সহ বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।” শেখ হাসিনা বলেন, “আজ আমরা টেলিডেনসিটি ১০৪ শতাংশে উন্নীত করেছি। দেশে এখন মোবাইল গ্রাহক ১৮ কোটির উপরে। ১৭ কোটি মানুষ, কিন্তু সিম ব্যবহার হচ্ছে ১৮ কোটির উপরে। মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে- এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৭০ লাখ।”
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণ করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের সকল টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। সাবমেরিন কেবল কক্সবাজারে এবং কুয়াকাটায় সংযুক্ত করা হয়েছে এবং আরও একটি সংযোগের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। “বর্তমানে বিটিআরসির ব্যান্ডউইথ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) পাশাপাশি আরও তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সাবমেরিন কেবলে সংযুক্তির লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার বিস্তৃত হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৮ কিলোমিটার।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “বিএনপি আমলে ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে দুই দুই বার বিনা খরচে সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে এই অজুহাতে তারা এই সুযোগ প্রত্যাখ্যান করে।” সরকারের সফলতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “২০১১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভের পাশাপাশি ১২ বছরে বিটিআরসি শুধু তরঙ্গ বরাদ্দ দিয়ে রাজস্ব আয় করেছে ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
“সরকার ৮ হাজার ৮৪৩টি ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮ হাজার ৫০০টি পোস্ট ই-সেন্টার স্থাপন করেছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকার ৩৫ হাজার ২৫৬টি ওয়েবসাইট সম্বলিত বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েবপোর্টাল তথ্য বাতায়ন চালু করেছে।” ১৯৫৬ সালে মন্ত্রী থাকাকালীন জাতির পিতার হাতেই এদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের গোড়াপত্তন হয় উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা জানান, এতে তার মায়েরও ভূমিকা ছিল। সে সময় এদেশে কলকাতাভিত্তিক বাংলা ছবির প্রদর্শনী হতো। একটি ছায়াছবি দেখে রিকশাযোগে ফেরার পথে তার মা (বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব) বাবার কাছে কথা তুলেছিলেন, বাংলাদেশেও কি এমন চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় না?
পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদে এক বিল উত্থাপনের মাধ্যমে এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতা গাজীপুরে ফিল্মসিটির জন্য জায়গাও বরাদ্দ দিয়ে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্রকে ‘শিল্প’ হিসেবে তার সরকার ঘোষণা দেয়।
সরকার চলচ্চিত্র সংসদ নিবন্ধন আইন ২০১১, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন-২০১৯ প্রণয়ন করেছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট। অসচ্ছল শিল্পী ও কলাকুশলীদের আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সিনেমা হল মালিকদের দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদী ব্যাংক ঋণ প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রণীত হয়েছে চলচ্চিত্র নীতিমালা।
যেকোনও দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জনগণ আমাদের বার বার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন বলেই এই কাজগুলো আমরা করতে পেরেছি। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আজকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সরকার চলছে, দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। “যদিও এর মাঝে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ এবং অগ্নিসন্ত্রাস-এমন অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই আমরা চাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেখানে আমাদের স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট ইকোনমি হবে, স্মার্ট সোসাইটি হবে, স্মার্ট গভর্নমেন্ট তথা প্রতিটি ক্ষেত্রই স্মার্ট হবে।” সরকারের চালু করা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আগে অবসর ভাতা কেবল সরকারি কর্মকর্তারাই পেত, সেটাকে আমরা এখন সর্বজনীন করে দিয়েছি। কেননা যখন তাদের (অবসরে যাওয়া বেসরকারি কর্মজীবী) কাজ করার সুযোগ থাকবে না, তখন তাদের জীবনটা যেন অর্থবহ থাকে এবং প্রত্যেক মানুষের জীবনটা যেন নিরাপদ হয়।”
দুই ভবন ও বিএফডিসি কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যখনই কোনো উন্নয়নের উদ্যোগ নিই, তখনই দেখতে পাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভিত্তি প্রদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ভিত্তির ওপর নির্ভর করেই আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।” অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।


প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৩ | সময়: ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ