দুর্গাপুর আ’লীগের সম্পাদককে পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নোটিশ

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাওকান্দি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হককে আইনী নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে ওই আইনী নোটিশে। দাওকান্দি কলেজের একাদশ শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী মিতালী খাতুনের পক্ষে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আসাদুজ্জামান ডাকযোগে আইনী নোটিশটি পাঠিয়েছেন।
সরকারি চাকুরী বিধিমালা লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক পদ-পদবীর অপব্যবহার সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে গত ২০ জুলাই ডাকযোগে (রেজিস্ট্রিকৃত এ/ডি সহ) আইনী নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থেকে কলেজের আয়-ব্যয়ের হিসাব কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে অবহিত করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যথায় দেশের প্রচলিত দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতে প্রতিকার চেয়ে মামলা করা হবে বলেও আইনী নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনী নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, দাওকান্দি সরকারি কলেজের বেশ কয়েকটি একাডেমিক ভবন ও নিজস্ব জমিজমা রয়েছে। পূর্বে এসব সম্পদ ও সম্পত্তি থেকে আসা আয়ের অংশ কলেজ ফান্ডে জমা হলেও অধ্যক্ষ পদে মোজাম্মেল হক যোগদান করার পর থেকে আয়ের কোনো হিসাব কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেননি তিনি।
দাওকান্দি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হওয়া সত্বেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন মোজাম্মেল হক। এমনকি ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হয়েছেন অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক। যা গণকর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ এর ২৫ ধারার পরিপন্থী।
আইনী নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক দিনের পর দিন কলেজে অনুপস্থিত থাকলেও হঠাৎ একদিন কলেজে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে শতভাগ উপস্থিতি দেখান।
অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও কার্যকলাপ তুলে ধরে আইনী নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি পুরাতন ও স্বনামধন্য রাজনৈতিক দল। এই দলের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকে কলেজ অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। প্রমাণস্বরূপ; দাওকান্দি হাটের ইজারাদারের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করায় অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক সহ আরও কয়েকজন শিক্ষকের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন ইজারাদার বোরহান আলী। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এসব ঘটনায় কলেজের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে বলেও আইনী নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আসাদুজ্জামান বলেন, মিতালী খাতুন দাওকান্দি কলেজের একাদশ শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় লেখাপড়ার খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে মিতালীর। নিয়ম অনুযায়ী উপবৃত্তি পাওয়া কথা থাকলেও মিতালী খাতুনকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, সরকারি গণকর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক দলের অতি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি, কলেজের সম্পদ তছরুপ, আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেয়া সহ অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের নানা অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে মিতালী খাতুনের পক্ষে আইনী নোটিশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখিত সময়ের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জবাব না দেয়া হলে দেশের প্রচলিত দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান এডভোকেট আসাদুজ্জামান।
মিতালী খাতুন বলেন, তিনি একাদশ শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। হত-দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় লেখাপড়ার খরচ বহন করা তাঁর পরিবারের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী উপবৃত্তি পাওয়ার কথা থাকলেও অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের অনুসারী না হওয়ায় উপবৃত্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার অধ্যক্ষকে জানানো হলেও অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক কর্ণপাত করেননি।
মিতালী খাতুন অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক। আর এই কাজে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আব্দুল ওয়াদুদ দারা। ওই নেতার আশীর্বাদপুষ্ঠ অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। যা দেখার কেউ নাই।
মিতালী খাতুনের মামা শহিদুল ইসলাম বলেন, মোজাম্মেল হক সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হওয়া সত্ত্বেও গণকর্মচারী বিধিমালা লংঘন করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হয়ে এলাকায় যা ইচ্ছা তাই করেন। তিনি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কলেজের ভবন ভাড়া, ভূসম্পত্তি থেকে আসা লভ্যাংশ আত্মসাৎ করেছেন। যার কোনো হিসাব কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেননি। এর আগেও অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের নানা অনিয়ম দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ডাক্তার মনসুর রহমান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই অভিযোগে সুপারিশও করেছেন। তবুও অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হককে বাঁচাতে বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে ওই অভিযোগ ধামাচাপা দিয়েছেন বলেও জানান শহিদুল ইসলাম।
জানতে চাইলে দাওকান্দি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বলেন, ব্যাক্তিগত ভাবে ও রাজনৈতিক ভাবে আমার সুনাম ক্ষুন্ন করতে মিথ্যা অভিযোগ এনে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মিতালী খাতুন নামে আমাদের এলাকায় কেউ নাই। তাছাড়া ওই নামে আমাদের কলেজে কোনো ছাত্রীও নাই। আমি আগেও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলাম। এবার দল আমাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করেছেন। সংগঠনের স্বার্থে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চাইলে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি নেবো।
আইনী নোটিশ পাওয়ার কথা অস্বীকার করে অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক দাবি করেন, আইনী নোটিশটি ভুয়া। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নাই। কলেজে সবকিছু আছে। সবকিছু দেখতে চাইলে এই প্রতিবেদককে কলেজে যাওয়ার জন্য বলেন অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, গণকর্মচারী বিধি লংঘন করে অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন আছেন এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সারাদেশেই এ বিষয়টি নিয়ে সাংগঠনিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আইনী নোটিশ প্রসঙ্গে অনিল কুমার সরকার বলেন, এ ধরনের কোনো নোটিশ আমি পাইনি। ভবিষ্যতে পেলে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার সাথে কথা বলতে তাঁর ব্যাক্তিগত ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।


প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর