প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘর পাচ্ছে আরও ২২ হাজার পরিবার

সানশাইন ডেস্ক: গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জমিসহ ঘর উপহার দিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প। এর আওতায় ঘর পেতে যাচ্ছে আরও ২২ হাজার পরিবার। বুধবার (৯ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর মাঝে ঘর বিতরণ করবেন।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১ পরিবার ভূমিসহ স্থায়ী নীড় পেয়েছে, যাদের থাকার জন্য নিজের কোনো জায়গা বা ঘর ছিল না। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, ২০ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং মুজিববর্ষে তৃতীয় পর্যায়ে দুই ধাপে মোট ৫৯ হাজার ১৩৩টি ঘর বিতরণ করা হয়েছে। এবার ২২ হাজার ১০১টি ঘর দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে বিতরণ করা মোট ঘরের সংখ্যা হবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ২২ হাজার ১০১টি বাড়ি হস্তান্তরের মধ্যে দিয়ে আরও ১২টি জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন। ৪১টি জেলার আরও ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন ঘোষণা করা হবে। এর ফলে গৃহহীনমুক্ত মোট উপজেলা হবে ৩৩৪টি এবং সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলা হবে ২১টি।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প বিশ্বে অনন্য প্রকল্প। কারণ, পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বিপুল সংখ্যক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়ি বিতরণ করা হয়নি। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপের এটি দ্বিতীয় পর্যায়। ২০২৩ সালের ২২ মার্চ দ্বিতীয় ধাপের অধীনে প্রথম দফায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করা হয়।
মুখ্য সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে তিন উপজেলায় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সুবিধাগ্রহীতাদের মাঝে বাড়িসহ জমি হস্তান্তর করবেন। প্রধানমন্ত্রী খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারাসত সোনার বাংলা পল্লি আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাগ্রহীতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করবেন। প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনরা ২ দশমিক ২ শতাংশ জমিতে ভালো মানের আধা-পাকা বাড়ি পাবেন।
তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন। এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরাসহ নয়টি জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ঘোষণা করেন।
নদীভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে এসব এলাকায় কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন হলে তাদের জমিসহ বাড়ি দেওয়া হবে, জানিয়ে তিনি বলেন, জমির মালিকানা স্বামী-স্ত্রী উভয়কে দেওয়া হয় এবং জমির রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশনও স্বামী-স্ত্রীর নামে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, সরকার শুধু খাস জমিতে প্রকল্পের জন্য বাড়ি নির্মাণ করছে না, বাড়ি নির্মাণের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছ থেকে জমি কেনা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও অনুদান পাওয়া যায়।
যাদের বাড়ি নেই, জমি আছে, তাদের জন্য সরকার কবে থেকে বাড়ি নির্মাণ শুরু করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সরকার এই প্রকল্পের আওতায় শুধু ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর যাদের বাড়ি নেই বা যাদের বাড়ি জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে, তাদের জন্য বাড়ি নির্মাণ শুরু করা হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়ি ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জন (একটি পরিবারে পাঁচ সদস্য ধরে)।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প ইতোমধ্যে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ পরিবারকে সরাসরি পুনর্বাসন করেছে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।


প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৩ | সময়: ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ