তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আর সম্ভব নয়: ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম

সানশাইন ডেস্ক: দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষদের সংগঠন ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম মনে করছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ‘আর সম্ভব নয়’। বরং সবার সহযোগিতা নিশ্চিত করে সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা ‘সম্ভব’।
রোববার সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন পর্যবেক্ষক দলের প্রতিনিধিরা। ইএমএফ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্ততি ও সাম্প্রতিক নির্বাচন বিষয়ে প্রতিনিধি দলের বিদেশি পর্যবেক্ষকরা জানতে চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আগামী নির্বাচনে আসতে চাইছেন। এ বিষয়ে ইসির আইন, বিধি তারা জানতে চেয়েছেন। ইসি আশ্বস্ত করেছে, পর্যবেক্ষকরা ভোটের আগে-পরে আসতে পারবে। কমিশন থেকে কোনো বাধা নেই।
ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপরে হামলার ঘটনায় ইসি কী পদক্ষেপ নিয়েছে, প্রতিনিধিরা কমিশনকে সে প্রশ্নও করেছে জানিয়ে আবেদ আলী বলেন, “এ বিষয়ে ইসি বলেছে, যারা হামলা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” ইএমএফ চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেছেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা।
“তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু অসাংবিধানিক, সে বিষয়ে (প্রতিনিধি) উনাদের কোনো আগ্রহ নেই। উনারা বলেছেন, সংবিধানে যেটা আছে, তার আলোকেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। উনারা বলছেন, কমিশনের যে আইন আছে তার যেন সঠিক প্রয়োগ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার যেন ইসিকে সাপোর্ট দেয়, এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করলে এই কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এটা উনারা আশা প্রকাশ করেছেন।”
সফররত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলে সাংবাদিকের বলেন, “আপনাদের সংবিধান তত্ত্বাবধায়ক সরকার অ্যালাউ করে না। এটি করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। ইসি যদি এটা করতেও চায়, তারা এটা করতে পারবে না। কারণ এটি করার কোনো আইনি কাঠামো নেই। এই মুহূর্তে এটা করা সম্ভব নয়।” আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দলের এ সদস্য মনে করেন, এই সরকারের অধীনে কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে।
আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক বিষয়ক সিনিয়র সাংবাদিক নিক পল সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশা করছি সংবিধান অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে ইসি।” পরে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে ইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। “আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবেন কি না, আসতে হলে তাদের কী করণীয়, এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত আলোচনা হয়েছে যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন কীভাবে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন আয়োজন করবে, কীভাবে কাজ করবে।”
ঢাকা-১৭ উপ নির্বাচন এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ ধরে ইসি সচিব বলেন, সম্প্রতি একটি সিটি করপোরেশন ও একটি সংসদীয় উপনির্বাচনে ‘ছোটখাটো যে সমস্যা’ দেখা দিয়েছিল, বিশেষ করে প্রার্থীদেরকে আক্রমণ করা হয়েছিল, সে বিষয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছিলেন বিদেশি প্রতিনিধিরা। “নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে যদি আসতে চায় তাহলে স্বাগত জানানো হবে। তবে অবশ্যই তাদেরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে হবে।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও নির্বাচন কমিশনাররা বৈঠকে অংশ নেন। ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী ইউসুকি সুগু, চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী এনডি লিন, ইএমএফ এর পরিচালক অধ্যাপক মাহফুজুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান মজুমদার।


প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৩ | সময়: ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ