সর্বশেষ সংবাদ :

বর্ষাকালেও বৃষ্টি নেই আমনক্ষেত চৌচির

নিয়ামতপুর প্রতিনিধি: আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। আর বর্ষা মৌসুমে আমন ধান রোপণের উপযুক্ত সময়। এ বর্ষা মৌসুমে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় অনেক দিন যাবত বৃষ্টির দেখা নেই।
বৃষ্টি না থাকায় মাঠের পর মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে আমন চাষীদের সেচ পাম্পের পানিই এখন একমাত্র ভরসা। এতে এ উপজেলার কৃষকদের আমন ধান চাষের খরচ অনেকগুন বেড়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নিয়ামতপুরে ৩০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৭ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। উপজেলায় ৯ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিবছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই বৃষ্টির পানিতে আমন ধান রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষকরা। এবার দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে পানির অভাবে কৃষক ধান রোপণ করতে পারছেন না।
মাঠে পানি না থাকায় হালচাষ ও ধান রোপণে কৃষকের ব্যস্ততাও নেই। এখনও মাঠে মাঠে চরছে গরু-ছাগলের পাল। কোন কোন কৃষক সেচ দিয়ে জমি লাগাতে শুরু করেছে। অন্যদিকে বৃষ্টির অভাবে কিছু জমিতে রোপণ করা আউশ ধানের খেত নিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলার মোহাম্মাদপুর গ্রামের কৃষক সেলিম রেজা বলেন, নিয়ামতপুরের কৃষকরা আষাঢ়ের ১৫ তারিখের পর ও শ্রাবণের ১৫ তারিখের মধ্যে আমন ধানের চারা রোপণ করে। এখন শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও আমরা পানির অভাবে জমি লাগাতে পারছিনা। আর কয়েকদিন দেখে সেচের ব্যবস্থা করে জমি লাগাতে হবে।
বগধন গ্রামের কৃষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, আষাঢ় শেষ হয়ে শ্রাবণ মাসের অর্ধেক চলে গেলেও খরা চলায় বেশিরভাগ কৃষক এখন বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক পাম্প ও শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের মাধ্যমে ধান রোপণের চেষ্টা করছে। জমিতে পানি দেওয়ার জন্য বিঘা প্রতি গভীর নলকূপ ও শ্যালো মেশিনের মালিককে দিতে হবে হাজার হাজার টাকা। এটি কৃষকের বাড়তি খরচ।
এদিকে সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় চাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ। তারা আরোও বলেন, নিয়ামতপুরে গত তিন সপ্তাহে একপশলা বৃষ্টিও হয়নি। মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে আছে। এ জন্য সেচ দিয়ে মাটি ভেজাতে অনেক বেশি পানি লাগছে। বৃষ্টিপাত না হলে এবারে আমন চাষে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ বাড়বে। বাড়তি খরচ করে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলে তখন কৃষকের আরও মরণদশা হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শামসুদ্দোহা বলেন, এখনও আমনের চারা রোপনের সময় আছে। তবে নিয়ামতপুরে সব মাঠেই সেচের ব্যবস্থা থাকায় কৃষকেরা সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে মাটি প্রস্তুত করে চারা রোপন করছেন। কৃষি বিভাগ থেকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হয় এবং চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল হাসান বলেন, এ বছর নিয়ামতপুরে ৩০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৭ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে।
উপজেলায় ৯ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকে গভীর নলকূপ দিয়ে সেচ ব্যবস্থায় আমন ধান রোপণ শুরু করেছে। যা এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ অধিক জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করা হয়েছে। তবে খরায় আমনের উৎপাদনে কোন প্রভাব পড়বে না বলে জানান তিনি।


প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৩ | সময়: ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ