অযথা যেন পানি নষ্ট না হয়: প্রধানমন্ত্রী

সানশাইন ডেস্ক: পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (পয়ঃশোধনাগার) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পানি শোধন করে দিচ্ছি। এই পানি ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। অযথা পানি যেন নষ্ট না হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পানি ব্যবহার সীমিত করেছে। আমাদের দেশে যেন সকলে পানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার একটু সীমিত করে। করলে সকলেরই লাভ, বিলটাও কম আসবে।নিজেরা সশ্রয়ী হতে হবে।
“উন্নত আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, নগরবাসী যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। প্রতিটি এলাকা, এমনকি গ্রামের মানুষ যেন নাগরিক সুবিধা সমানভাবে ভোগ করতে পারে।” ঢাকা মহানগরে ২৬০ কোটির লিটার পানির চাহিদা থাকলেও ঢাকা ওয়াসা এখন ২৭০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে বলে অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “চাহিদার চেয়ে বেশি পানি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ঢাকা ওয়াসার। পানির বিল এখন ১০০ শতাংশ আদায় করতে সক্ষম ওয়াসা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।”
আর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার আগের পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-৬ অর্থ বছরে ঢাকায় মাত্র ৬০ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পেত। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল এক কোটি বিশ লাখের মত। পানি উৎপাদন হত ১২০ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসার পানির বিল মাত্র ৬৪ শতাংশ আদায় হতো। রাজস্ব আয় ছিল মাত্র ৩০০ কোটি টাকা। এ অনুষ্ঠানে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পাশাপাশি পাগলা পয়ঃশোধনাগারের সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকারপ্রধান।
চীনা অর্থায়নে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ দশমিক ২ একর জমির ওপর নির্মিত দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রতিদিন ৫০ লাখ টন পয়োবর্জ্য পরিশোধন করতে পারবে, যা ঢাকার মোট পয়োবর্জ্যের ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মত। ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর দূষণ কমাতে এই পয়ঃশোধনাগার একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে সরকার আশা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের আর্থসমাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে আমাদের নির্বাচন ইশতেহারে বলেছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব এবং বাংলাদেশকে বদলে দেব। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। “‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ সেই কর্মসূচি আমরা হাতে নিই, মানুষের সেবা যত দিতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছিলাম। ফলে আজকে দ্রুত পানি উৎপাদনের সরবরাহে ১০০ ভাগ সক্ষমতা লাভ করে।” শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকায় এখন ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ পানি পাচ্ছে। ২৬০ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে ২৭০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহের সক্ষমতা ঢাকা ওয়াসার রয়েছে।
“ঈর্ষণীয় সাফল্যের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো ঢাকা ওয়াসাকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেবাদানকারী সংস্থা হিসেবে রোল মডেল বিবেচনা করে। এটা আওয়ামী লীগ সরকার সাফল্য, জনগণের সাফল্য। জনগণের বৃহত্তর সুবিধার জন্য এই কাজগুলো করা হচ্ছে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা ওয়াসা শহরের পানি সরবরাহের স্থায়ী সমাধানের জন্য ২০১৪ সালে একটি ওয়াটার মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে। সেই পরিকল্পনার আওতায় পদ্মা নদীর তীরে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি শোধন করে ঢাকা শহরে সরবরাহের জন্য পদ্মা পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প এবং মেঘনা নদীর পানি ব্যবহার করে ধলপুর এলাকায় ৪৫ কোটি লিটার পানি ক্ষমতা সায়েদাবাদ ওয়াটার প্ল্যান্ট করা হয়।
“সবগুলো আওয়ামী লীগ আমলে করা। ইতোমধ্যে পদ্মা পানি শোধনাগার চালু করা হয়েছে, বাকি দুটি কাজও চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ৭০ শতাংশ পানি নদীর উৎস থেকে সরবরাহ করা যাবে, যা পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই। আমরা ভূগর্ভস্থ পানি থেকে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।” গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত না থাকলে কোনো দেশের উন্নতি হয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের সময় আমি আর আমার ছোট বোন জার্মানিতে ছিলাম। মিলিটারি ডিক্টেটর আমাদের দেশে আসতে দেয়নি।
“৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণ এবং দলের নেতাকর্মীদের ওপর ভরসা করে আমি এক প্রকার জোর করে দেশে চলে আসি। তারপর থেকে শুরু হয় সংগ্রাম।” শেখ হাসিনা বলেন, “২১ বছর সংগ্রামের পর ৯৬ সালে আমরা সরকারে আসি, মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর জন্য প্রথম সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করি। সেভাবে শুরু হয় আমাদের পথ চলা।”
ঢাকার পাশাপাশি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নেও পানি শোধনাগার এবং পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী ও সচিবকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আমরা ঢাকা শহরের জন্য করলাম, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম ও শুরু করেছে, পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহর, প্রতিটি জেলা উপজেলা একেবারে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত পানি শোধনাগার এবং পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
“তার জন্য একটা মাস্টার প্ল্যান আপনাদের করতে হবে। এক মডেলে পরে আমরা যদি এখনই জায়গা নির্বাচন এবং কাজ শুরু করতে পারি, তাহলে পর্যায়ক্রমে আমরা তা করতে পারব। গ্রামের প্রতিটি মানুষ শহরের সুবিধা পাবে।” শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরের ২০ শতাংশ এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারছে ঢাকা ওয়াসা। সেটা বিবেচনায় নিয়ে স্যুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকা শহরের চারদিকে পাঁচটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা হবে।
“বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। স্মার্ট বাংলাদেশ সেটা সর্বক্ষেত্রেই স্মার্ট হবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। পয়ঃনিষ্কাশন বা সুপেয় পানি ব্যবস্থা স্মার্টলি হবে, এটাই আমরা চাই।” স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়ান, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ