গরু-ছাগলের চামড়া নিয়ে বিব্রত মানুষ

আসাদুজ্জামান মিঠু: রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর স্কুল পাড়ার গ্রাম। সেখানে প্রায় ৬২ পরিবার নিয়ে একটি সমাজ। ঈদুল আযহার দিন বৃহস্পতিবার নামাজ শেষ করে তিনটি গরু ও সাতটি ছাগল কোরবানী করেন সমাজের লোকজন। অনেক অপেক্ষার পর বিকালে গরু ১৬০ এবং ছাগলের চামড়া বিক্রি করে ৫ টাকা দরে।
পশু কোরবানীর রক্ত ও মল পরিস্কার করতে একটি শ্রমিক প্রয়োজন। যা দিয়ে একটি শ্রমিকের মজুরি দাম ও তারা পাননি। তাতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি গ্রামের মানুষের মধ্যে। সেখানকার সমাজ প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন সামসুর রহমান ও মাসুম রেজা নামের দুই ব্যাক্তি।
সমাজ প্রধান মাসুম রেজা জানান, কোরবানীর দিন সকালে এক মৌসুমী ব্যবসায়ী এসে গরু ১০০ এবং ছাগলের চামড়ার দাম ৫ টাকা বলে চলে যাই। দুপুর গড়ার পরে অন্য এক মৌসুমী ব্যবসায়ী এসে প্রতি গরু ১৬০ এবং ছাগল ৫ টাকা দর দেন। চামড়া পচে যাওয়ার ভয়ে সে টাকায় চামড়া তুলে দেন তাদের কাছে।
মাসুম রেজা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোরবানী পশু চামড়া বিক্রি করা টাকা সমাজের গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হয়। আর এবার বিতরণ তো দুরের কথা জবাই করা রক্ত ও মল পরিস্কার করতে একটি শ্রমিকের ৫০০ টাকা প্রয়োজন সে টাকাও মিলছেনা তিনটি গরু সাতটি ছাগলের চামড়া দিয়ে।
একই উপজেলার টকটকিয়া গ্রামে ১১টি গরু ও ১৫ ছাগল কোরবানী করেন সমাজের লোকজন। সেখান কার সমাজ প্রধান আফসার আলী জানান, দিন ভর অপেক্ষার পর গরু চামড়া ১৬০ টাকা করে বিক্রি করতে পারলেও ছাগলের চামড়া বিক্রি না হওয়াই তারা মাটির নিচে পুতে দিয়েছেন। চামড়ার কাঙ্খিত দাম না পেয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে অনেকটা রাখে ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে কোরবানীর পশু চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন মানুষ। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের এবার চামড়া কেনা নিয়ে অনেকটা অনিহা ছিল শুরু থেকেই। চামড়ার ক্রেতা শূন্যতায় অনেক গ্রামে কোরবানী পশুর চামড়া নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছেন মানুষ।
ঈদেন দিন গড়ালেও দেখা মিলেনি একজনও ক্রেতার। পরে বাধ্য হয়ে রাতে পানির দরে চামড়া তুলে দিয়েছেন স্থানীয় মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে। অনেক গ্রামে বিক্রি না করতে পেরে মাটিতে পুলে ফেলেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এচিত্র শুধু রাজশাহী জেলা গ্রামেই নয়, পুরো উত্তরবঙ্গের গ্রামে গুলোর একই অবস্থা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার নিজামপুর গ্রামের আব্দুল ওদুদ নামের এক সমাজ সেবক জানান,তার গ্রামের এবার ৮ টি গরু ও ২৭ টি খাসি কোরবানী দেয়া হয়েছে। প্রতিবছর ঈদের নামাজ পড়ার পড়েই কোরবানীর চামড়া কেনার জন্য একাধিক ব্যবসায়ী হুড়াহুড়ি করলেও এ বছর একজনও চামড়া কেনার ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে পরিচিত একজন মৌসুমী চাম ব্যবসায়ীর কাছে পানির দরে ২০০ টাকা করে গরু ও ৫ টাকা করে খাসির চাম বিক্রি করা হয়েছে॥
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানি পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম হবে ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা।
এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসি ও ভেড়ার চামড়ার দাম সারা দেশে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে ১৩-১৫ টাকা।
মৌসুমী ব্যবসায়ীদের একটি বড় সিন্ডিকেট একজোট হয়ে গ্রামের কোরবানীর পশুচামড়ার ক্রয় করেছেন পানির দরে। তারা শুরুতেই চামড়া কেনা কৃত্রিম ক্রেতা সংকট তৈরি করে। গ্রামের মানুষেরা চামড়ার ক্রেতা না পাওয়াই সন্ধা ও অনেকে রাত পর্যন্ত নিয়ে বসে ছিল। পরে সে সিন্ডিকের কাছে গরুর চাম ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা ও ছাগলে চাম গড়ে মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করেন।
একাধিক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, একটি গরুর চামড়া গড়ে ২৪ ফুট হয়। ঢাকার বাইরে সরকারের বেধে দেয়া ৩৫ টাকা ফুট দরে একটি গরুর চামড়া দাম পড়ছে ৮৪০ টাকা।
একটা গরুর চামড়ায় ১২ কেজি লবণ লাগে। যার দাম ১৫০ টাকা। প্রতি চামড়ায় শ্রমিক খরচ (মাঠে থেকে তুলে আড়তে আনা) ১০ টাকা, পরিবহন খরচ সহ প্রায় ২৬৫ টাকা খরচ পড়ে এছাড়াও প্রতিটি গরু চামড়া যাছাই-বাছাই করে প্রতি গড়ে আরো ১০০ টাকা কাটা পড়বে। সে অনুপাতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি তারা চামড়া কেনতে লোকশান গুণতে হবে।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পাদ অফিসের তথ্য মতে,জেলায় এ বছর গরু-ছাগল,মহিষ ভেড়া সহ ৩ লাখ ৭২ হাজার পশুর চামড়ার হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও রাজশাহীঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ,নাটোরও নওগাঁ জেলায় কোরবানী হয়েছে আরোও কয়েক লাখ পশু।


প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৩ | সময়: ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ