পবার কর্ণহারে চলছে অবৈধ পুকুর খনন

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর পবা উপজেলা শস্য ভান্ডার খ্যাত দারুশা অঞ্চলগুলোর উর্বর ফসলী জমি দিন দিন উজাড় করা হচ্ছে। ৩ ফসলী জমিগুলো ভেকু দিয়ে কেটে তৈরি করা হয়েছে বড়-বড় দীঘি। এ যেন পবা উপজেলায় পুকুর খননের মহোৎসব। ফলে এখানে যেমন কমছে কৃষি জমি, তেমনি পুকুর আর জলাশয়ের কারণে ফসলের মাঠে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। তেমনি মাটি বহনে নতুন রাস্তায় দফায় দফায় নষ্ট হচ্ছে। ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।
পবা উপজেলায় নিয়ম নীতিকে না মেনে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন চলতে থাকায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহীতে গত কয়েক বছরে মাছ চাষ কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে অতিমাত্রায় কমেছে কৃষিজমির পরিমাণ ১৫ হাজার হেক্টরও বেশি। অপরিকল্পিত পুকুর খননে জলাবদ্ধতায় প্রতি বছরই ব্যাপক ফসলহানি হচ্ছে। চাপও বাড়ছে পরিবেশের ওপর।
বৃহস্পতিবার বিকালে পবা উপজেলার কর্ণহার বড়বিলে ১২-১৫ বিঘা ফসলী জমিতে পুকুর খনন করছে কর্ণহার গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার আলীর ছেলে মো. সাহেব আলী। সেখানে কথা হয় পুকুর খননে নিয়োজিত জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি জানান, স্থানীয় আরএমপি কর্ণহার থানাসহ বিভিন্ন প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পবায় অনেকেই পুকুর খনন করছে। আপনারা লেখালেখি করবেন আমাদের বেশী টাকা লাগবে এর বেশী নয়। তবে পুকুরখনন হবেই।
স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশের চোখের সামনেইতো পুকুরখনন চলছে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রভাব বিস্তার ও প্রশাসন ম্যানেজ করেই চলছে এসব পুকুরখনন। এতে করে আবাদি জমির পরিমান দিন দিন কমে আসছে। সড়ক পথ নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশ পড়ছে হুমকিতে। আমরা কৃষিকাজ করতে পারিনা। এছাড়াও এই বিলের ঘাস ও লতা-পাতা খেয়ে গরু-ছাগল বাঁচতো। একদিকে পুকুর হওয়ায় এবং অন্যদিকে ঘাস না পাওয়ায় অনেকেই গরু-ছাগল বাদ দিয়েছে। এসব কারণেই মাংসের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একটি সুত্র নিশ্চিত করে বলেন, পবায় বিঘা প্রতি পুকুর খননে প্রশাসন ম্যানেজে লাগে ২০ হাজার টাকা। ঐ টাকার ভাগ যায় ইউএনও অফিস, এসি ল্যান্ড অফিসসহ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ প্রশাসনের নিকট। পুকুর খননকারীদের বক্তব্য প্রশাসন ম্যানেজ ছাড়া একটি পুকুরে এক কাঠা জায়গা কাটার ক্ষমতা নেই কারো।
এ বিষয়ে পুকুর খননকারীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসনসহ সকলকে ম্যানেজ করেই পুকুর খনন করছি, আপনার নিউজ করা দরকার হলে নিউজ করেন। বাতাস বন্ধ থাকলেও কর্ণহার বড়বিলে পুকুর খনন বন্ধ থাকবে না।
এব্যাপারে আরএমপি কর্ণহার থানার অফিসার্স ইনচার্জ থানা পুলিশকে ম্যানেজ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, অনেকে আমাদের, উপজেলা প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের ফায়দা নেয়া চেষ্টা করছে। যদি কেহ টাকা দেয়ার কথা থাকে তবে সে মিথ্যা বলছে। উপজেলা প্রশাসন অভিযানে আসলে কর্ণহার থানা পুলিশ পূর্ণ সহযোগিতা করবে এবং এরআগেও করেছে।
এ বিষয়ে পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লসমী চাকমা বলেন, পবা উপজেলায় পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিনিয়তই অভিযান চালানো হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানাও করা হচ্ছে এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি জমির শ্রেণী বদল করে আবাদি জমিতে পুকুর দীঘি খনন করা বেআইনি ও দন্ডনীয় অপরাধ।


প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩ | সময়: ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ