দুর্গাপুরে এএসআইয়ের বিরুদ্ধে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জমি দখলের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: রাজশাহীর দুর্গাপুরে পুলিশের সেই বিতর্কিত সহকারী উপ-পরিদর্শকের (এএসআই) বিরুদ্ধে এবার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। জমি দখলে বাধা দেয়ায় দুই নারীসহ তিন জনকে বেধড়ক পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া আহত এক জনকে দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে দুর্গাপুর থানার পুলিশ।
আহতরা হলেন, সিংগা গ্রামের আব্দুর রশিদ মাস্টারের ছেলে জুয়েল রানা (৪০), একই গ্রামের মৃত আবু হানিফের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৬০) ও রাবেয়া বেগমের পুত্রবধূ শিমু খাতুন (৩২)
পুলিশের অভিযুক্ত এএসআই আশরাফুল ইসলাম বর্তমানে বগুড়া জেলার গাবতলী থানার বাগবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত আছেন। ছুটিতে বাড়ি গিয়ে রোববার বিকেলে ভাড়াটে ক্যাডার নিয়ে জমি দখল করার চেষ্টা চালান এএসআই আশরাফুল ইসলাম। এএসআই আশরাফুল ইসলামের বাবার বাড়ি নওগাঁ জেলায় হলেও বসবাস করেন দুর্গাপুর পৌর সদরের সিংগা এলাকায় নানার বাড়িতে। তাঁর নানার নাম মৃত আসকান ফকির। এএসআই আশরাফুলের বাবা মৃত জসিম উদ্দিনও পুলিশে কর্মরত ছিলেন। সেই সুবাদে দুর্গাপুর থানায় থাকাকালীন তাঁর বাবা জসিম উদ্দিন বিয়ে করে সিংগা গ্রামেই থিতু হোন।
এর আগেও ঘুষ না পেয়ে ইয়াবা দিয়ে তাহেরপুর এলাকার এক ব্যবসায়ীকে ফাঁসিয়ে দেয়া, চারঘাট থানায় থাকাকালীন থানার ওসির মাথায় পিস্তল ঠেকানো, মৃত বাবার নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে জমি দখল, স্কুল শিক্ষকের জমি দখল, নিরীহ গ্রামবাসীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও দুধ বিক্রেতা এক বৃদ্ধকে চড় মেরে আলোচনায় আসেন পুলিশের সেই বিতর্কিত এএসআই আশরাফুল ইসলাম।
জানা গেছে, নানা অপকর্ম করে বারবার আলোচনায় আসা পুলিশের বিতর্কিত সেই এএসআই আশরাফুল ইসলাম নিজ কর্মস্থল বগুড়া জেলার গাবতলী থানার বাগবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে ছুটি নিয়ে নিজ এলাকায় যান গত বুধবার (৭ জুন)।
রোববার (১১ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভাড়াটে ক্যাডার নিয়ে আপন খালা রাবেয়া বেগমের ভোগ দখলীকৃত জমি দখল করতে যান এএসআই আশরাফুল। এ সময় খবর পেয়ে রাবেয়া বেগমের ছেলে ব্যবসায়ী বকুল ইসলামের ভাইরা ভাই জুয়েল রানা ঘটনাস্থলে যাওয়া মাত্রই এএসআই আশরাফুল জুয়েল রানার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার হুমকি দেন। জুয়েল রানা বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার ভাইরা ভাই বকুল ইসলামকে জানাতে চাইলে আশরাফুলের ভাড়াটে ক্যাডাররা লোহার রোড, হাতুড়ি, জিআই পাইপ ও ড্রেগার নিয়ে জুয়েল রানার উপরে হামলা করেন। এ সময় জুয়েলের মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়। জুয়েলের উপর হামলার এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে রাবেয়া বেগম আগাইতে গেলে তাকেও বেধড়ক মারপিট করা হয়। খবর পেয়ে বকুলের স্ত্রী শিমু খাতুন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাঁর উপরেও হামলা চালানো হয়।
ঘটনার পর স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাবেয়া বেগম ও জুয়েল রানাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। অপরদিকে শিমু খাতুনকে দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি রাখা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, জুয়েল রানা মাথায় ও বুকে আঘাত পেয়েছে। এছাড়া রাবেয়া বেগমের বাম হাত ভেঙে গেছে ও শিমু খাতুনের দুই পায়ে জিআই পাইপ দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তাঁর বাম পায়ের হাটুর নিচে হাড় ফেটে গেছে।
এদিকে, রোববার রাতেই রামেক হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ডে রাবেয়া বেগম ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জুয়েল রানাকে ভর্তি করা হয়েছে। তবে জুয়েল রানার মাথায় আঘাতের কারনে তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
ব্যবসায়ী বকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাদের ভোগ দখলীয় জমি-জমা নিয়ে পুলিশের এএসআই আশরাফুল ইসলামের সাথে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিলো। জমির মালিকানা দাবী করে আদালতে মামলাও করেছিলেন আশরাফুল। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত সেই মামলা নথিজাত করে দেন। পরে ওই জমিতে পুনরায় ঘর নির্মাণ করতে গেলে বকুলকে বাধা দেয় আশরাফুল।
বকুল আরও জানায়, বিবাদমান জমি নিয়ে এলাকায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে একাধিকবার সালিশ দরবার হলেও রায় বিপক্ষে গেলেই বিশৃংখল ঘটনা ঘটান আশরাফুল। পুলিশে চাকরি করার সুবাদে সব সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সালিশে আসা গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকেও ভয়-ভীতি ও হত্যার হুমকি দেন।
বকুল বলেন, ঘটনার সময় তিনি দোকান থেকে বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি সংবাদ পান তার স্ত্রী, মা, ও ভাইরা ভাই জুয়েলকে মেরে রাস্তায় ফেলে রেখেছে আশরাফুল ও তার ক্যাডার বাহিনীরা। পরে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যাওয়া মাত্রই তাকেও মারতে তেড়ে আসে আশরাফুল। প্রাণভয়ে প্রতিবেশী শফিকুল ইসলামের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর বকুলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে অভিযুক্ত এএসআই আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা বলতে তাঁর ব্যাক্তিগত মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি কল ধরেননি।


প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৩ | সময়: ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর