সর্বশেষ সংবাদ :

ক্লুলেস একটি হত্যার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: পাঁচ বছর পূর্বের চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস বিউটি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিরাজগঞ্জ। গ্রেফতারকৃত তিন আসামী স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সোমবার সকালে পিবিআই সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার রেজাউল করিম তার দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, গত ২০১৮ সালের ১৩ মে দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার সময় বিউটি খাতুন তার নিজ শয়ন ঘরে ঘুমিয়ে পরে। রাত পৌণে তিনটার দিকে ভিকটিমের মাতা কোমেলা খাতুন ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে দেখেন বিউটির ঘরের দরজা অর্ধখোলা। সেই সময় বিউটির মা ডাকলেও বিউটি সাড়া-শব্দ না করলে কাছে গিয়ে বিউটির শরীরে হাত দিয়ে নিস্তেজ দেখে চিৎকার দিলে বিউটির পরিবারের অন্যান্য লোকজন এসে ঘরের আলো জ্বালিয়ে ভিকটিম বিউটিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিউটির মৃত দেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মৃত দেহের ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেন। উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে ভিকটিমের পিতা সাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে এনায়েতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, সিরাজগঞ্জ টিম ছায়া তদন্ত করতে থাকে। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করাবস্থায় মামলা রুজুর প্রায় ২ বছর পরে বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার নির্দেশে পিবিআই, সিরাজগঞ্জ মামলাটির তদন্ত শুরু করে।
মামলাটি তদন্তকালে পুলিশ সুপার, পিবিআই, সিরাজগঞ্জের দিক নির্দেশনায় মামলার সন্দিগ্ধ আসামী ওমর ফারুক (২৮), পিতা আব্দুর রাজ্জাক, সাং ব্রাহ্মণগ্রাম, থানা এনায়েতপুর, জেলা সিরাজগঞ্জকে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলা, ঢাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ২৩ মে এবং ২৫ মে আরো ৩ জন সন্দিগ্ধ আসামী গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি পর্যালোচনা এবং সার্বিক তদন্তে জানা যায়, ভিকটিম বিউটি খাতুনের (২২) কোচগাঁও গ্রামে জনৈক আব্দুল্লাহর সাথে ২০১৪ সালে বিয়ে হয়। স্বামীর সাথে বিউটির বনিবনা না হওয়ায় ২০১৭ সালে বিউটি পিতার বাড়ীতে চলে আসে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পারিবারিক ভাবে মীমাংসার মাধ্যমে বিউটির স্বামীর সাথে বিউটির খোলা তালাক হয়। বিউটি পিতার বাড়ীতে থাকাকালে প্রতিবেশী ওমর ফারুক, পিতা আব্দুর রাজ্জাক বিউটির সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলত। মাঝে মধ্যেই বিউটিকে বিয়ের প্রস্তাব দিত।
ওমর ফারুক বিবাহিত হওয়ায় বিউটি, ওমর ফারুকের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হলেও তাদের মধ্যে মোবাইলে কথা হত। ঐ সময় বিউটির ছোট বোন আলোমতির স্বামীর পরিবারের সাথে ঝামেলা হলে বাদী সাচ্চু মিয়া তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের প্রভাবশালী স্বপন ব্যাপারী (৩৭), পিতা আমির হোসেন, সাং খোকশাবাড়ী, থানা এনায়েতপুর, জেলা সিরাজগঞ্জকে বিষয়টি সমাধান করার জন্য ভিকটিমের মোবাইল দিয়ে ফোন করে অনুরোধ করে।
স্বপনের মাধ্যমে বিউটির ছোট বোন আলোমতির স্বামীর বাড়ীর সমস্যার সমাধান হওয়ায় বিউটির পরিবারের সাথে স্বপনের সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। ভিকটিমের ছোট খালা আন্না মাদক ব্যবসা করায় সে বিউটির মোবাইল দিয়ে স্বপনের সাথে মাঝে মধ্যে কথা বলত।
অপর দিকে স্বপন মাদক সেবী হওয়ায় মাঝে মধ্যে স্বপন আন্নার বাড়ীতে যাওয়া আসা করত এবং মাদক সেবন করত। সেই সুবাদে বিউটির সাথেও স্বপনের দেখা সাক্ষাৎ হত এবং মোবাইলে কথাবার্তা হত। পরবর্তীতে স্বপন আন্নার মাধ্যমে বিউটির সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। বিউটির ছোট খালা আন্নার মাধ্যমে আন্নার বাড়ীতে স্বপন নিয়মিত বিউটির সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করত।
এমতাবস্থায় বিউটির পিতা অর্থাৎ বাদী সাচ্চু মিয়া স্বপনকে বলেন তার প্রতিবেশী ওমর ফারুক বিউটিকে ডিসটার্ব করে তাকে একটু শাসন করে দিতে হবে। স্বপন এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় সে ওমর ফারুককে শাসন করে। বিউটির সাথে স্বপনের ২ মাস সম্পর্ক চলার পরে বিউটিকে বিয়ে করার জন্য স্বপনকে চাপ দেয়।
স্বপন বিবাহিত হওয়ায় বিউটিকে বিয়ে করতে রাজি না হলে বিউটি স্বপনকে জানায় বিউটি অন্তঃসত্ত্বা। পরবর্তীতে বিউটি স্বপনের উপর আরো বেশী চাপ সৃষ্টি করলে স্বপন কি করবে তা ভেবে না পেয়ে ঘটনার ১০-১২ দিন আগে প্রতিবেশী ওমর ফারুককে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। স্বপন বিউটিকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে এবং ওমর ফারুককে স্বপনের সাথে থাকতে বলে। কিন্তু ওমর ফারুক রাজি না হলে স্বপন ওমর ফারুককে ভয়- ভীতি দেখায়। স্বপন বিউটির সাথে ওমর ফারুকের পূর্বের সম্পর্কের বিষয় দিয়ে ব্লাকমেইল করে হত্যার পরিকল্পনায় সাথে নেয়।
পরে স্বপন বিউটির ছোট খালা আন্নার কাছে বিউটিকে হত্যা করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আন্না তার নিজের ভাগনিকে হত্যা করতে রাজী না হলে স্বপন তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে রাজী করায়। বিনিময়ে স্বপন পঞ্চাশ হাজার টাকা আন্নাকে দিতে চায়।
স্বপন বিশ হাজার টাকা এবং ওমর ফারুক ত্রিশ হাজার টাকা সর্বমোট পঞ্চাশ হাজার টাকা আন্নাকে দেয়। তখন বিউটির ছোট খালা তার আপন মেজো বোন আনু বেগমকে বিশ হাজার টাকা দিয়ে বিউটিকে হত্যা করতে সহায়তা করে।


প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৩ | সময়: ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ