সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীতে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারণা করে অর্থ আদায় চক্রের চার নারীসহ ১৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১০টি মোবাইল ফোন, ১১টি ল্যাপটপ, ৫টি সিপিইউ, পেনড্রাইভ ও নগদ টাকা উদ্ধার হয়।
নগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্নস্থানে অভিযান চারিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো মাহিউদ্দিন মাহির (৩১), বিন সাদ মিনহাজ (২৩), ছানা মিয়া (৩৫), লিটন (৪৩), মেহেদী হাসান (২৩), হাসান ইমাম প্রিন্স (৩৩), বেলায়েত হোসেন (২৮), মারুফ আহমেদ (২৭), সাব্বির হোসেন লিয়ন (২৬), শিহাবুল ইসলাম নিশু (২২), ফায়েজুল ইসলাম (২৪), মো: সোহান খান (২১), আব্দুল ওয়াদুদ (২৫), ইতি আক্তার (২০), স্মৃতি শাহ সৌমিক (২১), আয়েশা (২১), ও রুবাইয়া (২০)।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ মার্চ রাজশাহী নগরীর আবুল এহসান তার ফেসবুকে জধঢ়রফ ঈধংয নামে একটি অ্যাপসে ৩০ হাজার টাকা লোনের বিজ্ঞাপন দেখেন। তিনি অ্যাপসটি ডাউনলোড করে তার মোবাইল নম্বর, এনআইডি নম্বর ও লাইভ ছবি দিয়ে রেজিট্রেশন করেন। ওই দিন রাতে একটি নগদ মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর থেকে তার মোবাইল ব্যাংকিং-এ ৭১৫ টাকা ক্যাশইন হয়। তিনি ওই নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পান। পরে ওই অ্যাপস চেক করে দেখেন তার নামে ৭১৫ টাকা জমা হয়েছে। পরে এহসান তাদের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন দিয়ে বন্ধ পান। তবে ই-মেইলের মাধ্যমে সে টাকা পরিশোধ করবে মেইল পাঠান। তখন প্রতারকরা একটি নম্বর দিয়ে টাকা পরিশোধ করতে বলে। এরপর তিনি ১৩০০ টাকা পরিশোধ করেন।
ওই দিন আবার আবুল এহসানের নগদ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয় এবং সুদ-সহ পরিশোধ করতে বলে। এরপর প্রতারক চক্র মোবাইল ফোনে জানায়, তার মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্ট, ছবি, ভিডিও-সহ যাবতীয় তথ্য হ্যাক করেছে। টাকা পরিশোধ না করলে তার নগ্ন ছবি তৈরি করে সব কন্টাক্ট নম্বরসহ ফেসবুকে ছড়িয়ে দিবে।
পরবর্তীতে প্রতারকরা বিভিন্ন সময়ে একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে কল দিয়ে ওই অ্যাপসের লোক পরিচয় দিয়ে টাকা চাইতে থাকে। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে প্রতারকরা তার নগ্ন ছবি তৈরি করে তাকেসহ তার কন্টাক্ট লিস্টে কয়েকজনের কাছে পাঠায়। এতে আবুল এহসান ভয়ে প্রতারকদের দাবীকৃত টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু প্রতারক চক্র তারপরেও বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছে টাকা দাবী করতে থাকে। তিনি আবারও তাদের টাকা দেন। এভাবে আসামিরা টাকার জন্য তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে।
সর্বশেষ ১৪ মে আবুল এহসানের এমন অভিযোগের রিপ্রেক্ষিতে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা রুজু হয়। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার অভিযানে নামেন।
বোয়ালিয়া থানা পুলিশের টিমটি এন্টি টেররিজম ইউনিটের সহায়তায় গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ১৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে দেশে এবং দেশের বাহিরে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করে আসছিলো বলে স্বীকার করে। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।