সর্বশেষ সংবাদ :

জন্মদিনে লড়িয়ে ফিফটিতে দলকে টানলেন মুশফিক

স্পোর্টস ডেস্ক: মুশফিকুর রহিম ব্যাট হাতে মাঠে নামার পর টিভি পর্দায় দেখানো হলে গ্যালারির দৃশ্য। বেশ কজন দর্শকের হাতে একটি করে অক্ষরে সাজানো ব্যানার, ‘হ্যাপি বার্থডে টু মুশফিক।’ অফিসিয়ালি জীবনের ইনিংসে এ দিন ৩৬ পূর্ণ হলো তার। তবে ম্যাচের পরিস্থিতিতে দল তার কাছে দাবি করছিল ২২ গজে ভালো ইনিংস। মুশফিক সেই দাবি মেটানোর পথে হাঁটলেন। হাল ধরলেন, এগিয়ে নিলেন দলকে। শেষটা অবশ্য খুব ভালো করতে পারলেন না তিনি। তবে বলার মতো লড়াই করলেন কেবল তিনিই।
চেমসফোর্ডে আয়াল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের ওয়ানডেতে বাংলাদেশের একমাত্র হাফসেঞ্চুরিয়ান মুশফিক। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ ওভারে দল তোলে ৯ উইকেটে ২৪৬ রান। ৬ চারে মুশফিক করেন ৭০ বলে ৬১। ওয়ানডে ইতিহাসে যারা জন্মদিনে পঞ্চাশ ছুঁতে পেরেছেন, তাদের মধ্যে মুশফিকের চেয়ে বেশি বয়সে পেরেছেন কেবল সনাৎ জয়াসুরিয়া। ৩৯তম জন্মদিনে ২০০৮ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮৮ বলে ১৩০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন লঙ্কান কিংবদন্তি।
মুশফিক শেষ পর্যন্ত টিকতে পারলে হয়তো সেঞ্চুরির কাছে যেতে পারতেন। সেটি হয়নি। তবে নতুন ব্যাটিং পজিশনে নিজের কার্যকারিতা দেখাতে পারলেন আরেকবার। গত মার্চে আইরিশদের বিপক্ষে দেশের মাঠের সিরিজ থেকেই শুরু হয় মুশফিকের নতুন ভূমিকা। ছয় নম্বরে ব্যাট করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। সেটি ছিল মূলত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তোলার ভাবনা থেকেই। ওই সিরিজে তার কাছ থেকে দল চাইছিল তেমন কিছুই। তিনিও নতুন ভূমিকায় নিজেকে মেলে ধরেন অসাধারণ দক্ষতায়। এক ম্যাচে করেন ২৬ বলে ৪৪, আরেক ম্যাচে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরি রেকর্ড গড়ে করেন ৬০ বলে অপরাজিত ১০০।
এবার এই ম্যাচেও ছয়েই নামানো হয় তাকে। তবে এ দিন পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের পর ভালো শুরু করেও সাকিব আল হাসান বিদায় নেন দৃষ্টিকটূ এক শটে। তিনে নেমে একপ্রান্ত আগলে রাখা নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৪ রানে আউট হন আলগা শটে। ২২তম ওভারে যখন মুশফিক ক্রিজে যান, ১০২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দল তখন বেশ বিপদে।
ঝড়ো ব্যাটিং নয়, দল তা কাছে চাইছিল হাল ধরা ইনিংস। তবে ইনিংস মেরামতের কাজটি তো এই দলে মুশফিকের চেয়ে ভালো কারও জানা নেই! বছরের পর বছর ধরে এই কাজটিই তো বেশির ভাগ সময় তিনি করে আসছিলেন বাংলাদেশ দলে। স্রেফ ব্যাটিং পজিশন ছিল ভিন্ন। মুশফিক তার কাজ শুরু করেন তাওহিদ হৃদয়কে সঙ্গী করে। উইকেটে যাওয়ার পরপরই কার্টিস ক্যাম্পারের বল পাঠান বাউন্ডারিতে। হৃদয় ততক্ষণে অনেকটাই থিতু। দুজনে মিলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু একটু পরে বাজে শটে হৃদয় ২৭ রানে আউট হলে জুটি থামে ২০ রানেই।
এরপর মুশফিকের লড়াই মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে। শেষ স্বীকৃত জুটির একজন দ্রুত আউট হয়ে গেলে দলের বিপদ ঘনীভূত হতে পারত আরও। কিন্তু মিরাজ উইকেটে যাওয়ার একটু পরই নান্দনিক দুই শটে টানা দুটি বাউন্ডারি মারেন জশ লিটলকে। জুটি জমে ওঠে দ্রুতই। মুশফিকও অবশ্য আউট হতে পারতেন ১৯ রানে। ক্যাম্পারের বলে পয়েন্ট তার ক্যাচ ছাড়েন হ্যারি টেক্টর। এরপর আর ভুল করেননি তিনি।
তবে দলের অন্যদের অনুসরণ করে মিরাজও উইকেট ছুড়ে আসেন ২৭ রানে। দারুণ সম্ভাবনাময় ষষ্ঠ উইকেট জুটি থমকে যায় ৬৬ বলে ৬৫ রানে। এরপর লড়াইটি হয়ে যায় মুশফিকের একার। তিনি লড়ে যান নিজের মতো করে। ৬৩ বলে স্পর্শ করেন ৪৪তম ওয়ানডে ফিফটি। ২৫০-২৬০ রান পর্যন্ত যেতে দল তখন তাকিয়ে কেবল তার ব্যাটেই। তিনিও সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু গড়বড় হয়ে যায় ৪৫তম ওভারে। জশ লিটলের বলটি ছিল মারার মতোই, অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে শর্ট বল। মুশফিক মারেন উড়িয়ে। কিন্তু পারেননি উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করার মতো জোরে মারতে, পারেননি বল নিচে রাখতেও। সহজ ক্যাচ নেন স্টিভেন ডোহেনি। শেষ দিকে শরিফুল ইসলামের ১৫ বলে ১৬ রানের ইনিংসে আড়াইশর কাছেযেতে পারে বাংলাদেশ। তবে মুশফিক শেষ পর্যন্ত থাকলে নিশ্চিতভাবেই আরেকটু সমৃদ্ধ হতো দলের সংগ্রহ। সেই আক্ষেপ থাকছেই। তবে দলের বিপর্যয়ে এ দিন ত্রাণকর্তাও তিনিই।


প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৩ | সময়: ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ