বাগমারায় ফসলি জমি নষ্ট করে আবারো পুকুর খনন

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: প্রশাসন সহ পুকুর খনন নিয়ন্ত্রনকারী সকল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে উপজেলার গোলায়কান্দি ইউনিয়নে ফের শুরু হয়েছে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব। এই ইউনিয়ন সহ আশেপাশের এলাকায় পুকুর খনন করে দেওয়ার জন্য ৮-১০ জনের একটি শক্তিশালি সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা পুকুরের আকার আকৃতি, বছরে কয়টি ফসল হয়, পুকুর খননের মাটি অন্যত্র বিক্রি ও স্থানান্তরের সুবিধা আছে কিনা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা চুক্তির বিনিময়ে পুকুর খননে সহযোগিতা করে থাকে। তাদের রয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন শাখা প্রশাকায় অন্তরঙ্গ দহরম মহরম সম্পর্ক। যে কারণে পুকুর খননকারীরা দিনে দুপুরে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন করে খননকৃতমাটি অন্যত্র বিক্রি করতে কাউকে তোয়াক্তা করছে না।
এভাবে যত্রতত্র ও লক্কর জক্কর কাঁকড়া নামধারী ভাঙ্গাচোরা ট্রাকটরে করে মাটি পরিবহনের ফলে সরকারের নতুন নতুন রাস্তা ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এভাবে মাটি পরিবহন করায় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা ভেঙ্গে একাকার হলেও এখানে মোটা অংকের টাকার সুবিধা পাচ্ছে কথিপয় দালাল, ইউএনও অফিসের দু’একজন কর্মকর্তা- কর্মচারী ও থানার কথিপয় দারোগা।
স্থানীয় গ্রামবাসী ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক দুই নেতা ও কয়েকজন কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালকান্দির কামারখালি এলাকায় সম্প্রতি প্রায় বিশ বিঘার অধিক তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছেন ওই এলাকার প্রভাবশালী ও জোয়ার্দ্দার আব্দুল কুদ্দুস সরদার। অতি কৌশলী ও ধান্দাবাজ আব্দুল কুদ্দুস সরদার সরাসরি নিজে পুকুর খননের সাথে নিজেকে যুক্ত না করে তিনি ওই ইউনিয়নের পুকুর খনন সিন্ডিকেট দালাল চক্রের শরনাপন্ন হয়েছেন। আর এই দালাল চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওই এলাকার কথিত গড়ফাদার একাধিক ইটভাটা ও বিশালআকৃতির দিঘীর মালিক আজাদ সরকার।
তিনি এর আগে প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে প্রায় ডজনখানেক দিঘী ও পুকুরের মালিক বনে গেছেন। এখন সেই কৌশল কাজে লাগিয়ে অন্যকে পুকুর খনন করে দিচ্ছেন। এখানে আজাদ সরকার চুক্তিতে পুকুর খনন করে দেওয়ার জন্য গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট বাহিনী।
এই বাহিনীর হয়ে কাজ করছেন গোয়ালকান্দির রামরামা এলাকার জিল্লুর রহমান, একই এলাকার জাহেদুল মোল্লা, বকুল খরাদী সহ কামারখালি এলাকার রফাতুল্যা, মাহাবুর রহমান সরকার ও মির্জাপুর এলাকার রাজু মোল্লা সহ ৮-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে এলাকায় নারী ও মাদক ঘটিত একাধিক অভিযোগও রয়েছে। তারাই এখন সিন্ডিকেট গড়ে তুলে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির কাজে পুকুর মালিকদের সহযোগিতা করে চলেছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, এই সিন্ডিকেট চক্রের নেতৃত্বে গোলালকান্দি ও আশেপাশের এলাকায় আরো ১০-১২ টি পুকুর খনন কাজ চলমান রয়েছে। তবে প্রশাসন এদের ব্যাপারে একেবারেই নির্বিকার।
স্থানীয়রা বলছেন, এখানে পুকুর খননে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে প্রচার চালানো হলেও রহস্যজনক কারণে দিনে দুপুরে ঘটে চলেছে পুকুর খননের বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর ফলে একদিকে সরকারি রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে সেই সাথে রাস্তায় মাটি পড়ে সামান্ন বৃষ্টিতেই সেই রাস্তায় চলাচলা অনুপযোগি হয়ে বাড়ছে জনদূর্ভোগ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী খলিলুর রহমান জানান, কোন ভাবেই সরকারি রাস্তার ক্ষতি সাধন করা যাবে না। মাটি পরিবহনের ওইসব যানবাহন সম্পর্ণ অবৈধ। মাটি বহনের এসব ট্রাকের চলাচল বন্ধে এর আগেও আমরা নোটিশ প্রদান করেছি। জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে ফসলী জমিতে পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে পুকুর মালিক আব্দুল কুদ্দুস সরদার পুকুর খননের বিষয়টি শিকার করে বলেন, এ জন্য ইউএনও অফিসে আবেদন করেছি। বিষয়টি পরিদর্শনের জন্য মৎস কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিদর্শনের আগেই কেন পুকুর খনন করছেন এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে সেখানে পুকুর খননের বিষয়ে পরিদর্শনের জন্য ইউএনও স্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে অফিস ছুটি হওয়ায় সেখানে আর যাওয়া হয়নি।
অবৈধ পুকুর খননে সহযোগিতার বিষয় জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে আজাদ সরকার সেখানে পুকুর খননে সহযোগিতার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তিন দিন আগে সেখানে ভ্যেকু (মাটিকাটা মেশিন) দিয়ে মাটি কাটতে সহযোগিতা করেছিলাম। পরে ইউএনও স্যার মোবাইলে নিষেধ করলে ভ্যেঁকু উঠিয়ে নিয়ে এসেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সুফিয়ান বলেন, শুধু গোয়ালকান্দি নয়। গোটা উপজেলাতে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পুকুর খনন বন্ধে চলতি মাসে একাধিক অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আবারও কেউ পুকুর খননের দুঃসাহস দেখালে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৩ | সময়: ৫:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ