সর্বশেষ সংবাদ :

মোহনপুরে বেড়েছে মৎসজীবী মাছচাষে ভাগ্য বদলের আশা

কেশরহাট প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পার্শ্ববর্তী উন্মুক্ত মরগাবিলে মিঠা পানিতে মাছ চাষের ফলে ভাগ্য খুলেছে হাজারো মানুষের। আগে বন্যায় তলিয়ে যেত ধান-পানবরজসহ রকমারি ফসল। এখন বিলের চারপাশ জুড়ে তৈরি হচ্ছে পানবরজ। এছাড়াও কৃষকরা বোরো চাষে পাচ্ছে পর্যাপ্ত ভর্তুকি। ভর্তুকি সরবরাহ করছেন বিল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বেড়েছে মৎসজীবীসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবিকানির্বাহ ।
জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার উত্তর সীমান্তের ২০ টি গ্রামের নিচু জমির সমন্বয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে মরগাবিল অবস্থিত। এ বিলটি নান্দনিক ফসলের বৈচিত্রেভরা। যেদিক দু-চোখ যায় শুধু ফসলেভরা। বিলের মাঝ ভাগের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে কেশরহাট-ভবানীগঞ্জ সড়ক। এজন্য মরগাবিলটি সবুজেভরা ফসলের মাঠ হিসেবে পুরনো পরিচিত রয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, এ বিলের অতীত ঐতিহ্যের মধ্যে ছিল প্রাকৃতিক উড়িরঘাস উৎপাদন। সেসময় ফসল ফলতোনা একেবারেই। তাই এখানকার মানুষগুলো খাবার সংকটে ছিল। কর্মক্ষেত্র ছিলনা বলে বিলে গরু চরানো ছিলো জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস। তবে সময়ের বিবর্তণে সম্পূর্ণ বদলে যায় বিলটির পুরাতন বৈশিষ্ট। কৃষকরা উঁচু জমির শর কাশিয়া সরিয়ে শুরু করে ইরি ধানের চাষ আর নিচু জমিতে মাছের চাষ। ধিরেধিরে বিলুপ্ত হতে থাকে উড়িঘাস। কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হতে থাকলেও প্রতি বছর বর্ষাকালে বন্যায় তলিয়ে যেত প্রায় ১০ হেক্টর জমির চাষকৃত আউশ ধান। বছরের পর বছর লোকসান গুণতে গিয়ে তারা অনেকটাই দেনায় পড়ে যেত। অবশেষে স্থানীয় কৃষকরা বন্যা হতে তাদের চাষকৃত মাছ ও ধান ক্ষেত রক্ষায় চাঁদা হারি তুলে তৈরি করে একটি মিনি স্লুইচ গেইট।
স্লইচ গেইট তৈরির পর থেকে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য খুলে যায়। পড়ে থাকেনা আর কোনো জমি। বন্যার পানি ঢুকেনা বলে সৃষ্টি হয়েছে জীবিকা নির্বাহের তিনটি প্রধান উৎস। একই সঙ্গে নিঁচু জমিতে চলছে মাছের চাষ, মাঝারি নিচু জমিতে দুই মৌসুমের বোরো চাষ এবং উঁচু জমিতে পান বরজের চাষ। এছাড়াও বিলের মাছ চাষকারী সংগঠন কৃষকদের দিচ্ছে সেচসুবিধা। একই সঙ্গে তিনটি উৎসের আয় থেকে স্বাবলম্বী হয়েছে হাজারো কৃষক পরিবার।
গত শুক্রবার (২০ আগস্ট) বিকেলে আলোচিত বিলটি ঘুরে দেখা যায়, প্রাকৃতিক নিয়মে বিলটির বৈচিত্র মনমুগ্ধকর। বিশাল এ বিলের চারপাশে রয়েছে সাজানো প্রায় ১৯ টির মতো গ্রাম। বিলের মাঝখানে রয়েছে দ্বীপের মতো জায়গায় ইশলাবাড়ী (ইশলাবাড়ী আশ্রায়ণ) গ্রাম। কেশরহাট-ভবানিগঞ্জ সড়ক বিলটিকে দু ভাগে বিভক্ত করেছে। রাস্তার দুধারে রয়েছে সারিসারি তালগাছ। বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষের জন্য রয়েছে অশংখ্য পুকুর দীঘি। এখন ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে জীবন্ত মাছ রপ্তানির জন্য বিলেরমধ্যে গড়ে উঠেছে বরফমিলসহ পাকৃতিক পানি কৃত্রিম উপায়ে সরবরাহের সুব্যবস্থাও।
মরগাবিলের কৃষক মালিদহ গ্রামের এনামুল, জসিম, রেজাউল, জাহাঙ্গীর ও গুপইল গ্রামের ছামাদ মাষ্টার, শহিদুল ইসলাম, বিষোহারা গ্রামের কমল মাষ্টার, ইছব আলী, রহিদুল ইসলাম এর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বিলে ইতিপূর্বে তেমন আবাদ হতোনা। পতিত জমি ছিলো যেখানে মাছ চাষ হোতনা।কিন্তু পরবর্তীতে মাছ এবং কৃষকের ফসল রক্ষার জন্য মৎসজীবি সংগঠনের অর্থায়নে একটি মিনি স্লুইচ গেইট নির্মান করা হয়। পাশাপাশি মালিকানাধীন পতিত সেই জমিগুলো লীজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করে বিভিন্ন মৎস্যজীবি সংগঠন। এরপর থেকেই এ বিলে যেন সোনা ফলছে।
কৃষকেরা বলেন, বিলে আমাদের ধানচাষের জন্য বিদ্যুত চালিত গভীর নলকূপের ব্যাবস্থা করা হয়। সবমিলে বিলটিতে মাছচাষ করে হাজারো কৃষক আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। আমরা মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছি।
মালিদহ মস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান বলেন, আমরা সমিতির মাধ্যমে খোলা স্থানে মাছচাষ করছি। এতে আমাদের সংসার চলছে এবং আমাদের পাশাপাশি হাজার হাজার কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে স্লুইচ গেইট নির্মাণ করেছি। যার সুফল ভোগ করছেন কৃষকরা। তাদের ধান রক্ষার পাশাপাশি পানবরজ রক্ষা পাচ্ছে। এতে অনেক আয় হচ্ছে জনগণের। এমনকি কৃষকরা বোরো ধান চাষ করে যার গভীর নলকূপের বিদ্যুত বিল পরিশোধ করে একাধিক মস্যজীবি সংগঠন।
জানতে চাইলে মরগাবিল মৎস্যজীবি সংগঠনের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক জানান, বিলটি মুলত কৃষক এবং মৎসজীবি সংঠনের উদ্যোগে ভালভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সংগঠনের মধ্যে যেন বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আমাকে তারা সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। বিলটিতে আমারও কিছু জমি রয়েছে।


প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৩ | সময়: ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ