সর্বশেষ সংবাদ :

নাটোরে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলায় আহত ১৫: রাজশাহীতে লাঠিচার্জ, চাঁদসহ আটক ৭

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির পথাসভা ও বিক্ষোভ মিছিলে দুই দফা লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাইদ চাঁদসহ সাতজনকে আটক থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সাগরপাড়া বটতলা মোড়ে এবং পৌনে ৪টার দিকে গণকপাড়া মোড়ে পুলিশের লঠিচার্জে অন্তত আহত ১০ জন হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি নেতারা।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি সোহারয়ার্দী হোসেন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীর অবস্থান কর্মসূচীর অনুমোদন ছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভূবন মোহন পার্কে। কিন্তু তারা অনুমদিত স্থানের বাইরে গিয়ে কর্মসূচী পালন করায় তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। পুলিশের নির্দেশনা অমান্য ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ সাতজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে। যাচাই বাছাই শেষে রাতে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আটককৃতরা অন্যদের মধ্যে রয়েছেন, পবা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, চারঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মৃধা, শলুয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক বিএনপি নেতা এমদাদুল হক, বাঘা উপজেলার হরিরামপুর এলাকার স্বপন, বাগমারার রামরামা গ্রামের মুনির হোসেন, গোদাগাড়ীর আমিনুল ইসলাম।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পদাক ও আহবায়াক কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তাফা মামুন জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নগরীর সাগরপাড়া বটতলা মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে পথ সভা শুরু করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি হারুন অর রশিদ। পথসভা শুরুর পর পরই পুলিশ লাঠি চার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পরে তারা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে গণকপাড়া মোড়ে আসলে সেখানে দ্বিতীয় দফায় লাঠিচার্জ করা হয়। এতে বিএনপি নেতারা ছত্রভঙ্গ হয়ে দলীয় কর্যালয়ে চলে যায়। পরে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার নিন্দা জানায় বিএনপি নেতারা।
গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, পুলিশের লাঠিচার্জ ও দৌড়া-দৌড়ির সময় পড়ে গিয়ে তিনিসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
আহতরা হলেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার, সদস্য গোলাম মোস্তফা মামুন, জেলা যুবদলের আহবায়ক মাসুদুর রহমান সজন, যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও অরন্য কুসুম, জেলা তাতীঁ দলের আহবায়ক কুতুবউদ্দিন বাদশা, বিএনপি নেতা জালালুদ্দিন, বাগমারা উপজেলা ছাত্রদল নেতা রাশেদুজ্জামান রাসেল ও গোদাগাড়ী উপজেলা যুবদল কর্মী মিল্টন হোসন প্রমূখ।
গ্যাস-বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি পৃথকভাবে অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে।
এদিকে স্টাফ রিপোর্টার, নাটোর থেকে জানান, নাটোরে শনিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসুচির অংশ হিসেবে ১০দফা দাবীতে জেলা বিএনপি’র অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসুচিতে সরকার দলীয় কর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলূর বক্তব্য চলাকালে সরকার দলীয় কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়।
এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল ছোঁড়া ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় মারপিট ও ইটের আঘাতে কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, যুবদল নেতা রনি ব্যাপারী গুরুতর আহত হয়। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম শরিফ ও রনি ব্যাপারীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব ও নাটোর শহর যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সায়েম হোসেন উজ্জল আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। রুহুল আমিন বিপ্লব ও সায়েম হোসেন উজ্জল নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রায় আধা ঘন্টা ব্যাপি ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মারপিটের পর দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি।
বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসুচি অনুযায়ী নাটোর উপ শহর মাঠে মঞ্চ তৈরীর সময়ই বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করে ভাংচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করে। শান্তি রক্ষার জন্য তারা উপ শহর মাঠ ছেড়ে দিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে অবস্থান ধর্মঘট করেন। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাদের অবস্থান ধর্মঘটে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধান অতিথি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বড় মিছিলসহ বিএনপি অফিসের দিকে আসতে থাকে। নাটোর বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাঁধা দিলে তারা পুলিশী ব্যারিকেট ভেঙ্গে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে আক্রমন করে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল ছোঁড়া ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কাজী শাহ আলম, সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন, জেলা যুবদল সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম ও স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ।
ঘটনার সময় জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছেন বলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবী করলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ণ পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজের অবস্থান ও ক্ষমতা জানান দিতে বিএনপির উপরে একের পর এক হামলা করছে। মত প্রকাশের নাগরিক অধিকার টুকুও আওয়ামী লীগ কেড়ে নিয়েছে।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেছেন, তাদের পূর্ব নির্ধারিত নাটোর উপ শহর মাঠের শান্তি সমাবেশ করার জন্য তারা মিছিলসহ যাওয়ার সময় নাটোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়। পুলিশী বাঁধার কারণে সেখানেই তারা শান্তি সমাবেশ করছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা এসময় শান্তি সমাবেশে ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা করে। জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ও সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন এসময় অস্ত্র দিয়ে গুলি করে। তিনি শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ও ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিনকে গ্রেফতারের দাবী জানান।
ঘটনার পর থেকে নাটোর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলি, ডিবির ওসি আবু সাদাত ও নাটোর থানার ওসি তদন্ত আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানান, বিএনপি’র সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে। তবে পুলিশ গুলির কথা স্বীকার করেনি।
এদিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলূ নাটোরের বাসা ছেড়ে চলে যান। এ সময় তিনি এসব ঘটনার জন্য সরাসরি সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের দায়ী করেছেন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এঘটনায় নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ টি এম মাইনুল ইসলাম বলেন, শহরের আলাইপুর এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দু দলের পক্ষ থেকে সমাবেশ আহবান করা হয়ে ছিলো। সমাবেশে চলাকালে দু পক্ষই ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। গুলি ছোড়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকমুখে শুনেছি।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৩ | সময়: ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ