শিশুর কান্নায় সংসারে ফিরলো দম্পতি

কোর্ট রিপোর্টার : বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা। সপ্তাহের শেষ দিন হওয়ায় রাজশাহীর আদালত অঙ্গনে বিচার প্রার্থীদের উপস্থিতি ছিলো বেশি। প্রতিটি আদালতের সামনেই গাদাগাদি করে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিচার প্রার্থীদের। রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২ আদালতে একটি যৌতুকের মামলায় জামিন শুনানি কালে ছোট্ট শিশুর কান্নার আওয়াজ দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিচারক মাসুদুজজামান (মির্জা মাসুদ) এর। বাদীর কাঠগড়ায় একটি সদ্য সাবালিকা মেয়ে (১৮/১৯) কোলে ৬ মাসের ফুটফুটে একটি শিশু কাদঁছে। আসামীর কাঠগড়ায় (২২/২৩) একটি তরুণ দাড়িয়ে।
আদালত সূত্র থেকে জানা যায় রাজশাহী মহানগরীর কাটাখালি থানার সমসাদিপুর গ্রামের শরিফুল ইসরামের ছেলে শিমুল পারভেজ এর সাথে একই গ্রামের স্বপন আলীর মেয়ে জান্নাত ফেরদৌস মিতুর বিয়ে হয় গত ৮ মাস আগে। এর পরে সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে আসামি বাদীনিকে তালাক প্রদান করে। ইতিমধ্যে তালাক কার্যকর হয়ে যায়। জামিন শুনানিকালে বাদীনির চোখে পানি এবং আসামিকে মাথা নিচু করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বাদী ও আসামির পক্ষে-বিপক্ষে আইনজীবীদের বক্তব্য চলতে থাকলেও আদালতের দৃষ্টি ছিলো অসহায় শিশুটির দিকে। শুনানীর এক পর্যায়ে বিচারক বলে উঠলেন শিশুটির ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বাদী এবং আসামি এক হতে চায় কিনা?
ঠিক তখনই বাদীনি এবং আসামী পরস্পরের কিছু দোষ ত্রুটি উল্লেখ করেন আদালতের সামনে। আদালত মনদিয়ে তাদের কথা শোনার পর বর্তমান সামাজের প্রেক্ষাপটে কিছু উপদেশ মূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তার পর বরফ গলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে বাদী এবং আসামী উভয়ে আদালতের মধ্যস্থতায় নতুনভাবে সংসারে ফিরতে রাজি হন।
ঘড়িতে বেলা ১টা বাজতেই রাজশাহী মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২ আদালতে তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। একে একে আদালতের এজলাস কক্ষেণ হাজির হন মেয়ে পক্ষের অভিভাবক, ছেলে পক্ষের অভিভাবক, রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট পারভেজ তৌফিক জাহেদী, বাদী ও আসামী পক্ষে নিযুক্তিয় আইনজী, বিভিন্ন কোর্টের কর্মচারী ও বিচার প্রার্থীরা। সর্বশেষ হাজির হন রাজশাহী মহানগর ৪ নং ওয়ার্ডের কাজী মো: জহিরুল ইসলাম। আদালতে কক্ষের ভিতরেই ১ লক্ষ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ছেলে এবং মেয়েকে বিয়ে পরানো হয়। বিয়ের পরেই আদালত অঙ্গনে শুরু হয় মিষ্টি বিতরণ। এ সময় উৎসুক জনতা বিবাহিত দম্পতিদের দেখতে আদালতে ভীড় করতে থাকেন। অনেকেই তাদের স্বাগতম জানান।
বিয়ে শেষে রাজশাহী মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২ আদালতের বিচারক মাসুদুজজামান (মির্জা মাসুদ) বাদীনি ও আসামিকে তার খাস কামরায় ডেকে নিয়ে সংসারের বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন এবং তাদের শিশুটিকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ আদর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাদী পক্ষের আইনজীবী রেবেকা সুলতানা(সুমি), মোর্শেদা বানু হেনা, আসামী পক্ষের আইনজীবী মো: শহিদুল ইসলাম, রুবিনা খাতুন, বাদীর বাবা মো: স্বপন আলী, মা মিতা বেগম, আসামীর বাবা শরিফুল ইসলাম, মা শ্যামলি বেগমসহ আদালতের বেঞ্চসহকারী ও অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দ।
এ ব্যাপারে রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রতিটি সন্তানেরই স্বাভাবিক জীবনজাপনের অধিকার রয়েছে। আদালতের মানবিকতায় আজ যে বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো তা একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ | সময়: ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর