বদলগাছীতে নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানি, চেয়ারম্যান সাময়িক বরখাস্ত 

বদলগাছী প্রতিনিধি

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা’কে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় এর উপসচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়। তার বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের এক নারী উদ্যোক্তা যৌন হয়রানির অভিযোগ করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব জেসমীন প্রধান স্বাক্ষরিত এক স্মারকে চেয়ারম্যান মাসুদ রানাকে ১০ কার্যদিবসে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

 

 

 

 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা। তার বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) এক নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানি এবং অনৈতিক প্রস্তাব প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার(ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯- এর ৩৪ (ঘ) ধারা অনুযায়ী নওগাঁ জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছেন।

 

 

 

 

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, চেয়ারম্যান মাসুদ রানা কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪ (৪) (ঘ) ধারার অপরাধ সংঘটিত করায় একই আইনের ধারা ৩৪ (১) অনুযায়ী উল্লিখিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে তার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। ২০২২ সালের ১৩জুন জেলা প্রশাসকসহ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ওই নারী উদ্যোক্তা।

 

 

 

নারী উদ্যোক্তা করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করছেন। গত ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগ থেকে চেয়ারম্যান মাসুদ রানা তাকে (নারী উদ্যোক্তা) বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করে আসছেন। মাসুদ রানা তাকে মুঠোফোনে এবং বেশ কিছু চিঠির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে তার যৌন হয়রানি আরো বেড়ে যায়। কুপ্রস্তাবে রাজি না হয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে নারী উদ্যোক্তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর মুঠোফোন থেকে কিছু গোপন তথ্য ডিলিট করে পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তা ফেরত দেওয়া হয়।

 

 

নারী উদ্যোক্তার সংসার রয়েছে এবং দুটি যমজ কন্যা সন্তানও আছে। চেয়ারম্যানের এমন যৌন হয়রানির কারণে তার সংসারে কলহসহ কর্মক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। অবশেষে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে। ঘটনার পর থেকে তার কর্মস্থলসহ সামাজিক ভাবে চলাচলের সমস্যা হচ্ছে এবং নানা ভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে।

সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, চিঠি এখনো হাতে পাইনি। তবে ফেসবুকে দেখেছি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে হেয় করতে আমার বিরোধীপক্ষ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেছিল। যেহেতু মিথ্যা একটা বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে আমি আইনিভাবে লড়বো। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়।
বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ নওগাঁর উপ-পরিচালক উত্তম কুমার রায় বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিকেলে হাতে পেয়েছি। চেয়ারম্যান মাসুদ রানাও হয়তো চিঠি পেয়েছেন। তার হাতে যখন চিঠিটি পৌঁছাবে তখন থেকেই বরখাস্ত কার্যকর হবে। তার পরিবর্তে যিনি প্যানেল চেয়ারম্যান আছেন, তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৩ | সময়: ১০:৩৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর