আগে টাকা পরে খেলা, হকি ক্লাবগুলোর সাফ কথা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রিমিয়ার হোক, প্রথম বিভাগ কিংবা দ্বিতীয় বিভাগ-হকি লিগ মানেই অনিয়মিত। হকির কোন লিগ মাঠে নামাতেই যতসব ঝক্কি-ঝামেলা। ক্লাবগুলোর নানা বাহানা। উদাসীনতায় গা ভাসিয়ে রাখেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারাও। সব মিলিয়ে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খেলা হকি এখন স্থবির। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের মতো একটি ভেন্যু থাকার পরও প্রাণ হারাতে বসছে খেলাটি। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোয় অংশগ্রহণ ঠিকঠাক থাকলেও হ-য-ব-র-ল অবস্থা ঘরোয়া লিগগুলোর।
অনেক চেষ্টার পর বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন অনিয়মিত হয়ে পড়া প্রথম বিভাগ লিগ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছিল। সব ঠিকঠাক থাকার পরও ক্লাবগুলো অর্থনৈতিক সংকটের কথা বলে মাঠে নামছে না। নভেম্বরে দলবদলও সেরে ফেলেছে ক্লাবগুলো। কথা ছিল ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে লিগের খেলা শুরু হবে। হয়নি। ওই সময় ফেডারেশনের ব্যস্ততা ছিল যুব দলের এএইচএফ কাপে অংশ নেওয়া নিয়ে। যে কারণে লিগ পেছানো হয়েছিল জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তার আগেই প্রথম বিভাগের ১২টির মধ্যে ১০টি ক্লাব ফেডারেশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে টাকা না দিলে তারা লিগ খেলবে না।
কীসের টাকা? প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ আসর মাঠে গড়িয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ১ কোটি টাকা অনুদানে। আগের লিগের পয়েন্ট টেবিলে অনুযায়ী ওই টাকা ক্লাবগুলোর মধ্যে বণ্টন করেছিল হকি ফেডারেশন। প্রথম বিভাগের ক্লাবগুলোর যুক্তি-প্রিমিয়ারের ক্লাবগুলো অনুদান নিয়ে খেললে তারা পাবে না কেন?
প্রথম বিভাগ লিগ কমিটির সম্পাদক হাজি মো. হুমায়ুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘১০টি ক্লাব অনুদান চেয়ে চিঠি দেওয়ার পর আমাদের সহ-সভাপতিরা তাদের জন্য কিছু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমরাও চেষ্টা করছি কীভাবে কি করা যায়। সভাপতির সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হচ্ছে আমাদের। টাকার সংকুলান না করে লিগের তারিখও নির্ধারণ করতে পারছি না। আশা করি সহসাই এটার একটা সুরাহা হবে। আমরা লিগ শুরুর তারিখ দিতে পারবো।’
প্রথম বিভাগের ১২ ক্লাবের মধ্যে ডিসেম্বরে অনুদান দাবি করে ফেডারেশনকে চিঠি দিয়েছে ১০টি। ঊষা ক্রীড়া চক্র ও রেলওয়ে এসসি কোনো চিঠি দেয়নি। যেদিন লিগ শুরু হবে সেদিনই তারা খেলবে। অন্য ১০ ক্লাবের আগে চাই টাকার নিশ্চয়তা, তারপর খেলা শুরুর তারিখ। অনুদান চাওয়া ১০ ক্লাব হচ্ছে-হকি ঢাকা ইউনাইটেড, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, পিডব্লিউডি এসসি, ব্যাচেলর্স এসসি, কম্বাইন্ড এসসি, শিশু-কিশোর সংঘ, মুক্তি বিহঙ্গ তরুণ সংঘ, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব, শন্তিনগর স্পোর্টিং ক্লাব ও রায়েরবাজার স্পোর্টিং ক্লাব।
ক্লাবের জন্য অনুদানের ব্যবস্থা না করতে পারলে কি লিগ হবেই না? এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আমাদের লিগের পৃষ্ঠপোষক গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। তাদের সঙ্গে আমরা ক্লাবগুলোর অনুদান দাবির বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি। তারা এখনো চূড়ান্ত কিছু আমাদের জানায়নি। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান যদি টাকা দিতে না পারে তাহলে আমাদের একভাবে ব্যবস্থা করতেই হবে। আমরা সভাপতির সঙ্গেও আলোচনা করছি। দেখি কি করা যায়।’
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে লিগ মাঠে নামাতে চেয়েছিল ফেডারেশন। পিছিয়ে আনা হয়েছিল জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তারপরও খেলা শুরু করা সম্ভব হয়নি টাকার দাবিতে ক্লাবগুলো অনঢ় থাকায়। তাহলে লিগ কবে নাগাদ শুরু হতে পারে? ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লিগ শুরুর দিনক্ষণ নিয়ে কোনো আভাসই দিতে পারলেন না ‘আসলে টাকার ব্যবস্থা না করে আমরা লিগ শুরুর তারিখ দিতে পারছি না।’
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আবদুর রশিদ শিকদার বলেন, ‘আমরা সহ-সভাপতিরা ক্লাবগুলোকে আশ্বাস দিয়েছিলাম কিছু অনুদানের ব্যবস্থা করার। পরে লিগ কমিটির সঙ্গেও বসেছিলাম। তখন লিগ কমিটি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যতটা সম্ভব ক্লাবগুলোর জন্য ব্যবস্থা করবে। লিগ কমিটি সেভাবেই চেষ্টা করছে। তখন একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ক্লাবগুলো অনুদান পাওয়ার এক মাসের মধ্যে লিগ মাঠে গড়াবে। লিগ নিয়ে এখন পর্যন্ত এতটুকুই আপডেট।’
১২ ক্লাবের মধ্যে ১০টি অনুদান চাইলেও ফেডারেশন ব্যবস্থা করতে চায় সবার জন্য। ‘১০টি ক্লাব চেয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু অনুদান দিলে সব ক্লাবকেই দিতে হবে। না হলে সেটা খারাপ দেখা দেখাবে’- বলছিলেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আবদুর রশিদ শিকদার।
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সময় জমজমাট ছিল মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম। বেশ কয়েকদিন খেলা নিয়ে মেতে ছিলেন হকির মানুষরা। কিন্তু তারপর থেকে আবার বিরাণভূমি হয়ে আছে দেশের একমাত্র হকি ভেন্যুটি। প্রথম বিভাগ লিগ শুরু না হওয়ায় দলবদল করেও অস্বস্তিতে খেলোয়াড়রা। খেলোয়াড়রা তাকিয়ে আছেন ক্লাবের দিকে। আর ক্লাবগুলো তাকিয়ে ফেডারেশনের দিকে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ | সময়: ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ