সর্বশেষ সংবাদ :

তাসকিনের তোপ সামলে সিলেটের টানা পঞ্চম জয়

স্পোর্টস ডেস্ক: অল্প পুঁজি নিয়েও লড়াই জমিয়ে তুললেন তাসকিন আহমেদ। বল হাতে আশা জাগালেন দুই স্পিনার আরাফাত সানি ও নাসির হোসেনও। কিন্তু বাকিদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত সিলেট স্ট্রাইকার্সকে আটকে রাখতে পারল না ঢাকা ডমিনেটর্স।
ঢাকায় টানা ৪ জয়ের পর চট্টগ্রাম পর্বেও নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটে জিতল সিলেট। ঢাকার করা ১২৮ রান ৪ বল হাতে রেখেই টপকে যায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। টানা পঞ্চম জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান সুসংহত করল সিলেট। জয় দিয়ে আসর শুরুর পর পরপর তিন ম্যাচ হারল ঢাকা। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ বোলিং করা তাসকিন এই ম্যাচে সিলেটের ব্যাটসম্যানদের কোনো সুযোগই দেননি। ৪ ওভারে স্রেফ ১২ রান খরচায় ১ উইকেট নেন তিনি।
তাসকিনের গতিময় নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে ১২৮ রানকেও মনে হচ্ছিল বড় লক্ষ্য। তবে মোহাম্মদ হারিসের শুরুর ঝড়ের পর মুশফিকুর রহিমের দায়িত্বশীল ব্যাটে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ সিলেটের হাতেই থাকে। শেষ দিকে থিসারা পেরেরার ঝড়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে দলটি। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সৌম্য সরকারের উইকেট হারায় ঢাকা। রেজাউর রহমান রাজার জায়গায় একাদশে সুযোগ পেয়ে প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন রুবেল হোসেন।
উসমান ঘানি ও দিলশান মুনাভিরা দেখেশুনে খেললেও বেশি দূর এগোতে পারেনি এই জুটি। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে জোড়া আঘাত হানেন ইমাদ ওয়াসিম। ওই ওভারের প্রথম বলের পর উইকেটের পেছন থেকে মুশফিক বলছিলেন, ‘এই ওভারেই উইকেট আসবে।’ পরের বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন মুনাভিরা। কাভার-পয়েন্টে দুইবারের চেষ্টায় ক্যাচ নেন আকবর।
প্রথমবারের মতো বিপিএলে ব্যাট করতে নেমে এক বলের বেশি টিকতে পারেননি রবিন দাস। বোল্ড হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে স্রেফ ৩২ রান করতে পারে ঢাকা। এক প্রান্ত আগলে রাখা আফগান ওপেনার ঘানিও বেশি দূর যেতে পারেননি। নাজমুল ইসলামের বলে বোল্ড হন ৪ চারে ২৮ বলে ২৭ রান করে। মোহাম্মদ মিঠুন বেশ খানিকটা সময় ক্রিজে থাকলেও রানের গতি বাড়াতে পারেননি; ইমাদের স্পেলের শেষ বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি। ১ চারে ১৫ রান করতে খেলেন ২৩ বল।
এরপর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দলকে কিছুটা লড়াই করার মতো জায়গায় নিয়ে যান অধিনায়ক নাসির হোসেন ও আরিফুল হক। দুজন মিলে ৩০ বলে যোগ করেন ৫০ রান। ১৬তম ওভারের শেষ বলে ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন নাসির। আমিরের করা পরের ওভারে একটি করে বাউন্ডারি মারেন নাসির ও আরিফুল। পাকিস্তানের পেসারের শেষ ওভারে স্লোয়ার ডেলিভারিতে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন আরিফুল।
ওই ওভারের শেষ বলে আরিফুলকে ফেরান আমির। ১টি করে চার-ছয়ে ১৬ বলে ২০ রান করেন আরিফুল। পুরো ইনিংস ফিল্ডিং করলেও শেষ ওভারের আগে বোলিংয়ে আসেননি মাশরাফি। সিলেট অধিনায়কের ওভার থেকে আসে ৪ রান। ৪ ওভারে স্রেফ ২০ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন পাকিস্তানি স্পিনার ইমাদ।
রান তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারেই দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মারেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে তাসকিন ছিলেন স্বরূপে, পরের ওভারে এসে খরচ করেন স্রেফ ১ রান। আল-আমিন হোসেনের করা তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকানোর পরের দুই বলে টানা দুটি চার মারেন পাকিস্তানি ওপেনার মোহাম্মদ হারিস।
এরপর থেমে যায় রানের গতি। পাওয়ার প্লে’তে কোনো উইকেট না হারালেও ৩৫ রানের বেশি করতে পারেনি সিলেট। নবম ওভারে সিলেটের দুই ওপেনারকে ফেরান ঢাকার অধিনায়ক নাসির। প্রথম বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ২০ বলে ১২ রান করা শান্ত। পঞ্চম বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বড় ছক্কা মেরে দেন হারিস। শেষ বলে আবারও ছক্কা মারতে গিয়ে স্টাম্পিং হন তিনি। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৩২ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন হারিস।
পরের ওভারের প্রথম বলে জাকির হাসানকে ফেরান আরাফাত সানি। তার পরের ওভারে মুশফিকের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদন হয়। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় ঢাকা। রিপ্লে দেখে মাঠের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন টিভি আম্পায়ার। তবে তা মেনে নিতে পারেনি ঢাকা। মুহূর্তের মধ্যে ৮ জন ফিল্ডার ঘিরে ধরেন মাঠের আম্পায়ারকে। কিছুক্ষণ থেমে থাকার পর আবার শুরু হয় খেলা।
নাসির ও আরাফাতের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মাঝের ওভারগুলোয় দ্রুত রান তুলতে না পারলেও দলকে লক্ষ্যে এগিয়ে নেন মুশফিক ও ইমাদ। মুনাবিরার করা ১৪তম ওভারে স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে নিজের স্ট্রাইক রেট একশ পার করান মুশফিক। তবে ইমাদ কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি। রানআউট হওয়ার আগে ১১ রান করতে খেলেন ২০ বল।
শেষ ৩ ওভারে ২৪ রান প্রয়োজন ছিল সিলেটের। নিজের শেষ ওভার করতে এসে প্রথম বলেই মুশফিককে বোল্ড করে দেন তাসকিন। অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটসম্যান ২৫ বলে করেন ২৭ রান। একের পর এক ইয়র্কার লেংথের ডেলিভারিতে তাসকিনের পরের ৫ বলে আসে স্রেফ ৪ রান। কিন্তু চাপ ধরে রাখতে পারেননি সালমান ইরশাদ।
পাকিস্তানের পেসারের করা ১৯তম ওভার থেকে ১৮ রান তুলে নেয় সিলেট। প্রথম তিন বলে দুটি বাউন্ডারি মারেন থিসারা। ফাইন লেগ ফিল্ডারকে ভেতরে দেখে সালমানের ওই ওভারের পঞ্চম বলে স্কুপ করে ছক্কা মারেন আকবর আলি। সৌম্যর করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়াইড লং দিয়ে ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করেন থিসারা।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ