সর্বশেষ সংবাদ :

গোদাগাড়ীতে বেপরোয়া মাদকচক্র

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক কারবারীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপেও থামানো যাচ্ছে না মাদকের আগ্রাসন। এ উপজেলায় মুচির বাক্সেও এখন মিলছে লাখ লাখ টাকার হেরোইন। মাদকের অবাধ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে এ উপজেলা ও সদরের অসংখ্য কারবারী। যুবক তরুন ও নারীরাও জড়িয়ে পড়েছে মাদকের কারবারে। বিশেষ করে হেরোইনের ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে জেলার সীমান্তবর্তী এ উপজেলা। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজতৈতিক নেতারও এ উপজেলায় মাদকের সঙ্গে জড়িত।
সর্বশেষ সোমবার সন্ধ্যায় এ উপজেলায় এক মুচির কাঠের বাক্সের ভেতর প্রায় ৫০ লাখ টাকার হেরোইন পাওয়া গেছে। উপজেলার সিঅ্যান্ডবি মোড় এলাকায় এ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার মুচির নাম মিঠুন দাস (২৬)। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চক নারায়ণপুর গ্রামে তার বাড়ি। রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল কলোনি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো সে।
রাজশাহী র‌্যাবের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রুহ-ফি-তাহমিন তৌকির বলেন, ‘মিঠুন মুচি পরিচয়ে রাজশাহীতে বসবাস করলেও মাদক ব্যবসার জন্য গোদাগাড়ী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাতায়াত করতো।’ তিনি আরো বলেন, ‘সোমবার প্রায় ৫০ লাখ টাকার হেরোইন নিজের বাক্সে নিয়ে পাচার করছিলো মিঠুন। র‌্যাবের গোয়েন্দা দলের তৎপরতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে একই রাতে রাজশাহী মহানগরীতে ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় তাদের ব্যবহৃত দুইটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এরা হলো আবদুর রহিম (৩৭) ও মাইনুল (২৮) । রহিম রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার বিদিরপুর মাদ্রাসাপাড়া এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে ও মাইনুল রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার চামটা মধ্যপাড়া এলাকার আইনালের ছেলে।
রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আল মামুন জানান, গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম মহানগর এলাকায় মাদকদ্রব্য উদ্ধারে বিশেষ অভিযান করছিলো। এসময় তারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন, দুইজন মাদক ব্যবসায়ী দামকুড়া থানার হরিপুর এলাকার মেসার্স লিমন ফিলিং স্টেশনের সামনে মাদক বিক্রির জন্য অবস্থান করছে। গোয়েন্দা পুলিশের ওই টিম দামকুড়া থানার হরিপুর এলাকায় মেসার্স লিমন ফিলিং স্টেশনের সামনে অভিযান পরিচালনা করে রহিম ও মাইনুলকে আটক করে। এসময় রহিমের কাছে থাকা ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করে। সেইসঙ্গে তাদের ব্যবহৃত দুটি মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়। এছাড়া সোমবার দিবাগত গভীর রাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৩৭ গ্রাম হেরোইনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলো, রমজান আলী (২৫), জিহাদ আলী (২০) ও শেফালী বেগম (৫২)। এদের বাড়িও জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহীর সীমান্তবর্তী উপজেলা গোদাগাড়ী ও বাঘার মাদক ব্যবসায়ীরা আবারো সক্রিয় হয়েছে। দেশের সর্বাধিক মাদকপ্রবণ এলাকা জেলার গোদাগাড়ী আবারো মাদক পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে হেরোইনের সিংহভাগই সীমান্তপথে ভারত থেকে পাচার হয় গোদাগাড়ী রুট হয়ে সারাদেশে পাচার হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র রাজশাহীর গোদাগাড়ীতেই রয়েছে তিন শতাধিক তালিকাভুক্ত মাদক পাচারকারী। এদের মধ্যে দেড় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী সক্রিয় রয়েছে। এরা আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোয়ার বাইরে থাকলেও ধরা পড়ে ছোট মাদক কারবারিরা। গোদাগাড়ীর চিহ্নিত মাদক কারবারির মধ্যে রয়েছে, মহিশালবাড়ীর আব্দুল মালেক, সনি, রায়হান, মোফা, সোহেল, ল্যাংড়া শামীম, টিপু, মনির, নবীন, শহিদুল ইসলাম ভোদল, ডিমভাঙ্গার রিনা, রেলবাজারের কারিমা, মাদারপুরের ইসাহাক, তারেক, মেডিকেল মোড়ের দুরুল হোদা, কালু, লালবাগের মিজান, বৃটিশ, রেলগেটের বাবু মেম্বার, তিতাস, বাইপাস এলাকার শালেমা খাতুন, উজান পাড়ার দুরুল, মিঠু, বাবু, সাদ্দাম, রহিম, মিন্টু, প্রেমতলী এলাকার তরিকুল। এরমধ্যে মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেলের পিতা কিছু দিন আগে গ্রেফতার হয়েছে ডিবি পুলিশের কাছে। মাটিকাটা এলাকার আহাম্মদ আলী শীর্ষ মাদক কারবারি। তার রয়েছে প্রচুর অবৈধ সম্পদ। এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানাও শীর্ষ মাদক কারবারী।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ী ছাড়াও চারঘাট ও বাঘা এখন মাদকের প্রধান রুটে পরিনত হয়েছে। খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মামুদ চৌধুরী বলেন, পাশ্ববর্তী দেশ বা অন্য দেশ থেকে মাদক প্রবাহিত হয়ে আমাদের দেশে আসে। সেই মাদক আমাদের সমাজকে আকৃষ্ট করে ফেলেছে। যা আমাদের যুবসমাজকে ভয়ঙ্কর একটা বিপদে ফেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন মাদক ব্যববায়ীরা এখন টার্ন করেছেন। তারা আাগের মাদক পরিবহন পথ বাদ দিয়ে ভারতের ত্রীপুরা-মেজরাম দিয়ে মাদক নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, রাজশাহী জেলার চারটি উপজেলা গোদাগাড়ী, পবা, বাঘা ও চারঘাটের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৭২ দশমিক ৯০ কিলোমিটার। যা ২৯টি ইউনিয়নের ৭৭৩টি মৌজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এরমধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলার নয়টি ইউনিয়েনের সঙ্গে সীমান্ত ১১ কিলোমিটার। পবা উপজেলার ৮টি ইউনিয়েনের সঙ্গে ২৯ দশমিক ৯০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। যা ভারত থেকে হোরইন এবং ফেন্সিডিল প্রবেশ করে। বাঘা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের সঙ্গে ১৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এখানে ফেন্সিডিল প্রবেশ করে। এছাড়ার চারঘাট উপজেলার ৬ ইউনিয়নের সঙ্গে ১৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। যেখানে হেরোইন, ফেন্সিডিল অনুপ্রবেশ করে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ | সময়: ৫:২২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ