সর্বশেষ সংবাদ :

আশ্রয়ণের বাড়িতে এখন সুখে দিন কাটান প্রতিবন্ধী কচি

গোমস্তাপুর প্রতিনিধি: ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে দেশের ৬৪ টি জেলার ৪৯২ টি উপজেলায় এ বাড়িগুলোর নির্মাণ করার কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় তিনটি ধাপে ৬৫৮টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
চতুর্থ ধাপে বর্তমানে ৭৫টি বাড়ি নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন বাড়িগুলো সঠিকভাবে ও সঠিক নিয়মে নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোমস্তাপুর ও জেলা প্রশাসক চাঁপাইনবাবগঞ্জ, প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর রাখছেন। দুই শতক জমির মালিকানা সহ সেমিপাকা দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ি করে দেয়া হয়েছে। সঙ্গে দেয়া হয়েছে রান্নাঘর, টয়লেট, সুপেয় পানি সহ বিদ্যুৎ সংযোগ। আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষের জন্য রয়েছে যথেষ্ট জায়গা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশে তিনটি ধাপে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ২৩৩টি বাড়ি উপহার হিসেবে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে বিতরণ করেছে।
পরের ভিটায় বসবাস করে দিন কাটছিল প্রতিবন্ধী কচি বেগম আর এনামুলের। শারীরিকভাবে তারা প্রতিবন্ধী। একটি বাড়ি পাওয়ার জন্য তারা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছিল। একসময় নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুনের।
তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উপহারের বাড়ীতে। বাড়ী পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলেনি কচি বেগম আর এনামুল হক। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ী পেয়ে তারা ধন্যবাদের পাশাপাশি দোয়া করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য।
বলছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের পূণর চাঁদপুর গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসরত প্রতিবন্ধী কচি বেগম আর এনামুলের কথা। বাড়ী পাওয়ার আগে তারা বসবাস করতো অন্যের ঠিকানায়। এনামুল থাকতো রেলওয়ের বস্তিতে আর কচি বেগমের ঠিকানা ছিল রহনপুরের ষাড়বুরূজ এলাকায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুনের সহযোগিতায় এখন তাদের ঠিকানা হয়েছে রহনপুর ইউনিয়নের পূণর চাঁদপুর গ্রামের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ীতে। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে তারা আনন্দে আত্মহারা।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পাওয়া প্রতিবন্ধী কচি বেগমের সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদকে জানান, আমি একজন অসহায় মহিলা। জন্মের দুই বছর পর দূরারোগ্য ব্যাধির কবলে পড়ে আমার দুই পা অক্ষম হয়ে যায়। আমি স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারিনা।
সংসারে আছে আমার বয়স্ক মা আর বাবা হারা একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান। স্বামী তিন মাস আগে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সংসার চালানোর জন্য কোন টাকা পয়সা আমাকে দেয় না। বর্তমানে সংসারে একমাত্র আয় করার ব্যক্তিটা হলো আমার বয়স্ক মা।
তবে সংসার চালানোর জন্য আমিও বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করছি। আমি সেলাই মেশিন চালাতে পারি। কিন্তু সেলাই মেশিন কেনার কোন সামর্থ আমার নেই। ইউএনও স্যার আমাকে একটা সেলাই মেশিন দিতে চেয়েছেন। আমাদের ইউএনও স্যার খুব ভালো।
আমি যেদিন বাড়ির জন্য স্যারের দোতলা অফিসে কষ্ট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলাম আমার মেয়েকে নিয়ে তখন স্যার খবর পেয়ে আমার অবস্থা দেখে নীচে নেমে আসে আর আমাকে একটা বাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলেন। আমি স্যারের জন্য আজ বাড়ি পেয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। স্যারকে যেন আল্লাহ ভালো রাখেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করছি আল্লাহ যেন উনাকেও ভালো রাখেন। আমার বাড়ির ব্যাবস্থা করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কথা হয় আরেক প্রতিবন্ধী এনামুল হকের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি পেয়ে আমি খুব খুশি। আমাদের ইউএনও স্যার আমার বাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমার মাথা গোঁজার কোন ঠাই ছিল না। আজ আমার একটা পাকা বাড়ি আছে। আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। আল্লাহ যেন ইউএনও স্যারকে খুব ভালো রাখেন। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করছি আল্লাহ যেন উনাকেও সুস্থ রাখেন। পরিবারে দুই ছেলে এক মেয়ে ও আমার স্ত্রী সহ মোট পাঁচ জনের বসবাস। আমার ছোট ছেলেটি স্কুলে পড়াশোনা করে।
সংসারে আয় উপার্জন করার ব্যাক্তি আমি নিজেই। অনেক বয়স হয়েছে আমার। তাই আমার ইচ্ছে একটি ছোট মুদি দোকান দেয়া যেন বাকি জীবনটা সুখে স্বাচ্ছন্দে কাটাতে পারি। এজন্য আমি প্রশাসন সহ সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের শুভদৃষ্টি কামনা করছি।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়িতে উপকার ভোগীরা কেমন আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সোহরাব জানান, আমি প্রতিনিয়ত উপকার ভোগীদের খোঁজ খবর রাখছি। বিশেষ করে যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী তাদের প্রতি আমি আন্তরিকতার সহিত কাজ করে যাচ্ছি।
ইতোমধ্যে আমি তাদের অনেক সহযোগিতা করেছি আগামীতে করব এ আশ্বাস আমি তাদের দিয়েছি। প্রতিবেশীদের সাথে কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে আমি দ্রুততার সহিত সমাধান করার চেষ্টা করি।
আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসরত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের মতো একটি মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরাসরি সম্পৃক্ত করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।
উন্নত মানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে সুবিধাভোগীরা যেন সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে এজন্য সবসময়ই তাদের খোঁজ খবর নেয়া হয়। কেউ কোন সমস্যায় পড়লে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে আমরা তাদের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত পরিবারগুলো খুব খুশি কেননা তাদের না ছিল মাথা গোঁজার ঠাঁই, না ছিল নির্দিষ্ট ঠিকানা। এখন তারা নির্দিষ্ট ঠিকানা পেয়েছে, ফলে শান্তিতে সুখের নীড়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছে। তাইতো তারা চিরকৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ | সময়: ৫:২১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ