চরে পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের আশা

নুরুজ্জামান, বাঘা: কুয়াশা ভেদ করে শীতের সকালে বাঘার পদ্মার চরাঞ্চলের জমিতে পেঁয়াজ তুলতে ব্যাস্ত বেশ কিছু নারী-পুরুষ শ্রমিক। কেউ উঠাচ্ছেন, আবার কেউ বা ছাঁটাই-বাছাই করছেন। উদ্দেশ্য ভালো দামে বাজারে বিক্রি। এবার হচ্ছেও তাই, ফলে পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি বাঘার চরাঞ্চলের পেঁয়াজ চাষীরা। তারা এ অঞ্চলের পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ শেষে বাজারজাত করছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সরেজমিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টায় বাঘা উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে প্রবেশ করলে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। কৃষকরা এ বছর পেঁয়াজের বাজার মুল্য ভালো পেয়ে বেজায় খুশি হয়েছেন বলে জানান।
তাদের মতে, গত বছর বন্যার পানি নামতে দেরি হওয়ায় বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে কিছুটা সময় লাগে। তার পরেও পেঁয়াজের বাজারমুল্য স্থিতিশীল ছিল। এ কারণে এবার প্রায় সকল কৃষকই কম-বেশি পেঁয়াজ চাষাবাদ করেছেন। এ দিক থেকে এখন পর্যন্ত বাজার মুল্যে ভালো পাওয়ায় চাষীরা খোশ আমেজে রয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বাঘা উপজেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষমাত্রা ছিল প্রায় চার হাজার হেক্টর। যা অতিক্রম করে চাষাবাদ হয়েছে সাড়ে চার হাজার হেক্টর। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে। সে মোতাবেক চরবাসীদের অনেকেই আগাম পেঁয়াজের চাষ করেছেন।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, বাঘার চরাঞ্চলের পেঁয়াজের গুনগতমান ভালো। এ কারণে এখান থেকে প্রতি মৌসুমে বাস এবং ট্রাক যোগে পেঁয়াজ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
চরাঞ্চলের কৃষক বাবলু দেওয়ান ও আকছেন শিকদার জানান, তারা গতবছর ইচ্ছে থাকার পরও বন্যার পানি নামতে দেরি হওয়ায় উপযুক্ত জমি না পাওয়ায় খুব বেশি পেঁয়াজ চাষ করতে পারেন নি। এদিক থেকে এবার চরাঞ্চলের অসংখ্য কৃষক অনুকূল আবহাওয়া ও উপযুক্ত মাটি পেয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছেন।
তারা বলেন, এ বছর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের বাজার সন্তোষজনক রয়েছে। এ কারণে এ অঞ্চলের পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা পুরণের পাশা-পাশি রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমদানি করা হচ্ছে।
চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের পেঁয়াজ চাষী গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি এ মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে বাজার মুল্য পেয়ে ছিলেন ২৭ থেকে ২৮ টাকা কেজি। কিন্তু এবার বিক্রি করতে পারছেন ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। এ থেকে তিনি সহ প্রায় সকল কৃষকই লাভের মুখ দেখার স্বপ্ন দেখছেন।
এদিকে সমতল এলাকার বাউসা গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক ও আড়ানীর কৃষক বিপ্লব আলী জানান, তারা প্রতি বছর কম-বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষাবাদ করে থাকেন। বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার মুল্য ভাল দেখে তাদের ভালো লাগছে।
তাদের মতে, সরকার যদি এখন থেকে পেঁয়াজের বাজার ধরে রাখতে পারে তাহলে সামনের মৌসুমে উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। আর যদি না পারে, তাহলে উৎপাদন কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিবে।
বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লা সুলতান জানান, এ বছর দেশের সর্বত্রই কম-বেশি পেঁয়াজের চাষ-আবাদ হওয়ায় উৎপাদন বেড়ে গেছে। এরফলে বাজার মুল্য স্থিতিশীল রয়েছে।
তার মতে, বাঘার সমতল এলাকায় যে পরিমান পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় তার চেয়ে অনেক বেশি উৎপন্ন হয় উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে। তিনি পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য কৃষকদের সরকারী ভাবে বীজ প্রণোদনা সরবরাহ করা থেকে শুরু করে নানা রকম পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে জানান।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ | সময়: ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ