সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহী অঞ্চলে ফের শৈত্যপ্রবাহ

স্টাফ রিপোর্র্টার : টানা এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কম থাকায় এমনিতেই শীতের তীব্রতায় কাবু হয়ে পড়েছিল মানুষ। এর ওপর শনিবার থেকে আবারও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ফলে শীতের তীব্রতায় অস্থির হয়ে উঠেছে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ।
ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দুপুরের পর কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও তার নিরুত্তাপ আলো শীতার্ত মানুষের শরীরে উষ্ণতা ছড়াতে পারছে না। এমন বৈরি আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষ। কৃষিতেও দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রভাব।
রাজশাহীর ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় মানুষের পাশাপাশি এখন পশু-পাখিরাও শীতে কষ্ট পাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের দেওয়া পূর্বাভাস বলছে, আরও কয়েক দিন রাজশাহী অঞ্চলে শীতের তীব্রতা এমন থাকতে পারে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এটিই চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রাজীব খান বলেন, ভোর ৬টার পর থেকে আর তাপমাত্রা কমেনি। ফলে এটিই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, ঘন কুয়াশার কারণে শনিবারও বেলা ১২ টা পর্যন্ত রাজশাহীতে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। ভোরে ঘন কুয়াশার কারণে প্রধান সড়কগুলোতে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। বেলা ১২ টার পর মহানগরীতে সূর্যের দেখা মিলেছে। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকার কারণে এখন কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। হাড় কাঁপানো শীতে ছিন্নমূল মানুষ বিপাকে পড়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. বিল্লাল হোসেন জানান, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা এখন ক্রমাগত বাড়ছে। কোল্ড ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে মানুষ হাসপাতালে আসছেন বেশি। এজন্য ইনডোর ও আউটডোরে শীতজনিত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেওয়ায় রাজশাহীর কৃষিতে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। কুয়াশার কারণে বরাবরই বোরো বীজতলা ও রবি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে জমির বোরোতে কোল্ড ইনজুরি ও আলুতে লেটব্লাইট (পচন) দেখা দেয়। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মাজদার হোসেন বলেন, এ বছর শুরু থেকেই রাজশাহীতে শীতের প্রকোপ বেশি। তবে শেষ সময়ে এমন বৈরি আবহাওয়া রবি শস্যের জন্য কাল হয়ে ওঠে। তাই কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্ক রয়েছেন। বর্তমানে জেলার পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। টানা দুই দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এই জেলায়। শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবারও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি বইছে হিমেল হাওয়া। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। ঘন কুয়াশা আর শীতে অনেকে রাস্তার পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া তীব্র শীতের হাত থেকে বাঁচতে অনেকে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদর হাসপাতালসহ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জাহিদুল হক জানান, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ ও হিমেল হাওয়ার কারণে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া সকালে রাজধানী ঢাকায় এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ঢাকাতে আজকের তাপমাত্রাই সর্বনিম্ন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শনিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক এ তথ্য জানান। ওমর ফারুক বলেন, ‘আজ সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গাতে ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ঢাকাতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আপাতত দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে আগামীকাল থেকেই দিনের কুয়াশা অনেকটা কমে যাবে। তবে রাতের কুয়াশা থাকবে। মূলত আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা একটু বাড়তির দিকে থাকলেও ১০ অথবা ১১ জানুয়ারি তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমতে থাকবে। তার মানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নামতে পারে।’
শৈত্যপ্রবাহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৭টি জেলায় জায়গায় শৈত্যপ্রবাহ আছে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া এবং বরিশালের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপাতত দিনের তাপমাত্রা বাড়বে। এর ফলে কুয়াশার প্রভাব কিছুটা কমবে। আগামী পরশুদিনের মধ্যে কুয়াশা কমে যাবে এবং দিনের তাপমাত্রা বাড়বে। কুয়াশা কমলে দিনের বেলায় থাকবে না তবে রাতের দিকে কুয়াশা পড়তে পারে।’


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ | সময়: ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ