রাবিতে বিভাগীয় সভাপতি নিয়োগে ’৭৩ এর এ্যাক্ট লংঘনের অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের নতুন সভাপতি নিয়োগে ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট লংঘনের অভিযোগ উঠেছে। এ্যাক্ট মেতাবেক বিভাগেটিতে সভাপতি দায়িত্ব পালনে যোগ্য দুইজন সহযোগী অধ্যাপক থাকা সত্বেও অন্য বিভাগ থেকে প্রেষণে এক অধ্যাপককে সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে ৩ বছরের জন্য প্রেষণে নিয়োগ পান জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বনাথ শিকদার। গত ১৬ ডিসেম্বর তিনি সভাপতি পদে মেয়াদ শেষ করেন। এর মাঝে ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুইজন সহযোগী অধ্যাপক ড. অমিত কুমার দত্ত ও ড. ফারুক হাসানকে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্বপদে স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়।
১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্টের ভলিউম-১ এর ১৮ পৃষ্ঠার ২৯ নং ক্রমিকে বিভাগীয় চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের বিধান অনুযায়ী, সর্বনিম্ন সহকারী অধ্যাপক বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব নিতে পারবেন। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক বিভাগের সভাপতি হওয়ার নজির আছে।
তবে ড. শিকদার তার সভাপতির মেয়াদ শেষ করার ৭ দিন আগেই গত ১০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক আদেশে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান-কে প্রেষণে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্বপদে বদলি করে তিন বছরের জন্য সভাপতি পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এ বিষয়ে গত ১২ ডিসেম্বর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয়ের অভিযোগ এনে বিভাগটির শিক্ষকেরা ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে এক চিঠি দেন।
চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মে কোনো বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও তদূর্ধ্ব পদে কর্মরত থাকলে সভাপতি নিয়োগে তাঁদের মধ্য থেকেই জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুসারে নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। বিভাগে বর্তমানে স্থায়ীভাবে দুজন শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত এবং তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন। বিভাগের সভাপতি নিয়োগে ওই দুই শিক্ষকেরই সভাপতি হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা আছে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স উপেক্ষা করে অন্য বিভাগের শিক্ষককে সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। চিঠিতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
তবে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিঠির কোন জবাব দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বরং ১৭ ডিসেম্বর পূর্বাহ্নে বিভাগটিতে নতুন সভাপতি হিসেবে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত সেই আদেশ অনুযায়ী আগামী তিন বছরের জন্য প্রেষণে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান যোগদান করেছেন।
এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করছেন বিভাগটির সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারুক হাসান। তিনি বলেন, এ্যাক্টে স্পষ্ট বলা আছে, বিভাগে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক সভাপতি হতে পারবেন। কিন্তু সভাপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। প্রশাসনের অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্য আছে। কেননা সামনে এ বিভাগে নিয়োগ হবে। আমরা কেউ সভাপতি হলে প্রশাসনের তেমন সুবিধা নাও হতে পারে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, অধ্যাপক বিশ্বনাথ শিকদারকে ওই পুনঃনিয়োগের আবেদনটি বাতিল হয়েছে। একটি বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে অধিকতর দক্ষ ও যোগ্য জনবল প্রয়োজন। তাই অন্য বিভাগ থেকে আগের সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, এখন সেটাই করা হয়েছে। এখানে নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে একটা অধ্যাপক পদ। যিনি অধ্যাপক ছিলেন তিনি দায়িত্ব পালন শেষে নিজ বিভাগে এসেছেন। তাই অন্য বিভাগ থেকে সেখানে একজন অধ্যাপক বদলি করা হয়েছে এবং জ্যেষ্ঠ্যতার ক্রম অনুসারেই একজন অধ্যাপক সভাপতি হয়েছেন। কেননা বিভাগে কোন অধ্যাপক নেই। এতে নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ | সময়: ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ