রাজশাহীতে পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট প্রকাশের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার : মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুর্লিশ সদস্যদের গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়ছেন তালিকায় বাদপড়া অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ মুক্তিযোদ্ধারা। বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে অবসরপ্রাপ্ত পুর্লিশ সদস্যদের মধ্যে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন রাজশাহী মহানগরীর হড়গ্রাম পূর্বপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পুলিশ বাহিনীর অগ্রণী ভূমিকা এক গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ডাকে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পুলিশ বাহিনীর বীর বাঙালিরা সর্বপ্রথম ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। চাকরী ও জীবন বাজি রেখে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনীকে উপর্যপরি আক্রমণ করে পরাস্তের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা।
এই স্বাধীনতার সুফল বাঙালি জাতি পেলেও আমরা পুলিশ বাহিনী হতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও আমরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাইনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে নির্দেশনা দেন-একাত্তরের পর বাহিনীতে ফেরা মুক্তিযোদ্ধারাও পাবেন ভাতা। যা ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এই ভাতা প্রযোজ্য হবে। আমাদের সেই স্বীকৃতির প্রস্তাব বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে এখন বাধা পড়েছে। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে যোগাযোগ করলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির গেজেট প্রকাশের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পুলিশ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টি স্ব-স্ব চাকরি বইতে লিপিবদ্ধ থাকার পরেও দীর্ঘ ৫২ বছর পরেও স্বীকৃতি মেলেনি। ১৯৯৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা লাল মুক্তিবার্তায় প্রকাশ করলেও আমাদের মতই অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুলিশ সদস্যের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ বাহিনীর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের নামের তালিকা বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সদস্য নুরুল ইসলাম, পুলিশ সদস্য আলমগীর আলীর ছেলে ডা. মোজাম্মেল হক ও পুলিশ সদস্য মতিয়ার রহমানের ছেলে আব্দুল খালেক বকুল।
অবসর প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ আব্দুল লতিফ বলেন, আমি পুলিশ বাহিনীতে চাকরী করা অবস্থায় ৭ নং সেক্টরের অধীন দিনাজপুর, ফুলবাড়ী এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ করি। ১৯৯৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করে তখন আমি আবেদন করেও তালিকাভূক্ত হতে পারিনি। এই বিষয়টি তখন এসপিকে জানালে তিনি বলেন, ভূল হয়ে গেছে আবার আবেদন করেন। পরে আবেদন করি। এর পর ২০০৩ সালের দিকে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকে। আমি আওয়ামী লীগের চেতনার হওয়ায় সেই সময় বাধ্যতামূলক আমাকে অবসরে পাঠিয়ে দেয়। আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদে হাইকোর্টে মামলা করেলে এক বছর পর চাকরী ফিরে পেয়ে ২০০৮ সালে অবসর গ্রহণ করি।
মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, একাত্তরে তিনি পুলিশ বাহিনী থেকে রাজশাহী পুলিশ লাইন্স ও পবা মোহনপুর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। যুদ্ধপরবর্তি সময়ে চাকর ছেড়ে নিজ বাড়ীতে থাকতে শুরু করে। পরে মাইকিং করে জানালো হলো যারা চাকরিতে চিলো তাদের যোগদিতে। আমরা যোগদান করি। একাধিকবার আবেদেন করলেও এখনো গেজেটভূক্ত হতে পারিনি বলে আক্ষেপ করেন তিনি।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ | সময়: ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ