বাগমারায় পিপিআরে মরছে ছাগল-ভেড়া

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারায় ছাগল ও ভেড়ায় পিপিআর রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে এলাকায় শীত বাড়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশুর মধ্যে পিপিআর রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভাইরাসজনিত এ রোগে অর্ধশতাধিক ছাগল ও ভেড়া মার গেছে। মারা যাওয়া ভেড়াগুলোর মধ্যে অধিকাংশ সম্প্রতি উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবারের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করা ভেড়া।
তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে এ রোগ নিয়ন্ত্রনে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে দাবি করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেন, উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় পিপিআর রোগ দেখা দেওয়ায় ভেটেনারী সার্জন পবিত্র কুমারের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি দল গঠন করা হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত এলাকায় পিপিআরের টিকাদান শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, পেস্টি ডেস পেটিটস ইন রুমিন্যন্ট এর সংক্ষিপ্ত নাম পিপিআর। পিপিআর গবাদিপশু যেমন ছাগল, ভেড়া, গাড়লে এর একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ছাগলের নাকে মুখ হতে তরল নির্গত হতে থাকে ও পাতলা পায়খানা করে। গবাদি পশুর শরিরে ১০৫-১০৮ ডিগ্রী ফা. তাপমাত্র ছাড়াও আক্রান্ত প্রাণীর মুখে ঘা দেখা দেয়।
এ কারণে খাবার না খেয়ে মাথা নিচু করে থাকে। ঠিকমত সেবা ও চিকিৎসা না নিলে মারা যায়। উপজেলার বালানগর গ্রামের ফায়সাল মাহমুদ তামিম জানান, হঠাৎ করে তার শখের পোষা একটি খাশি (ছাগল) পিপিআর রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রন্তের পর তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে ও সঠিক যত্ন নিয়ে ১৫-২০ দিন পর তার খাশি ভালো হয়েছে। একই ভাবে তার পাশের বাড়ি রশিদদের একটি ছাগল ওই রোগে মারা গেছে বলে তিনি জানান। একই গ্রামের রহমত আলী, রফিক হোসেনসহ কয়েকজনের ছাগল পিপিআর রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
দিকে উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবারের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করা ভেড়াগুলো বেশী মরে যাচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর উপজেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৫৮টি পরিবারের মধ্যে এক জোড়া করে ভেড়া বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়।
‘সমতল ভূমিতে বসবাস করা অনগ্রসর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’–এর আওতায় এই ভেড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুলের হাত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেড়াগুলোর দাম পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। মহব্বতপুর গ্রামের কড়ি রায়, তাহেরপুরের বলাই চন্দ্র সরকারসহ সুবিধাভোগীরা বলছেন, বিতরণের কয়েক দিনের মধ্যেই রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের ৩৮টি ভেড়াগুলো মারা যায়। প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গত প্রায় একমাস আগে নভেম্বরে মাজামাঝিতে ভেড়াগুলো দূর থেকে আনায় সেগুলো পিপিআর রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
এছাড়া বৃহৎ উপজেলা ১৬টি ইউনিয়ন দু’টি পৌর সভায় কিছু কিছু এলাকায় হঠাৎ করে পিপিআর রোগ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সরকারের দেয়া ভেড়া যাদের মারা গেছে, তাদের নতুন ভেড়া দেওয়া ব্যবস্থ করা হচ্ছে। ৩৮টি ভেড়া কি কারণে মারা গেল তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেনটেচ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্পের ভেড়া সরবরাহের দায়িত্ব পায়। গত বছরের ৩০ মার্চ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কাজ পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানকে গত ১৭ আগস্ট কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ১৯ নভেম্বর বাগমারায় ১১৬টি ভেড়া হস্তান্তর করা হয়। ওই দিনই সেগুলো বিতরণ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ স্থানীয় সংসদের সহযোগীতায়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আহসান হাবিব মারা যাবার কথা স্বীকার করে বলেন, ভেড়াগুলো পিপিআর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তারা অসুস্থ ভেড়াগুলোকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। বর্তমানে ভেড়াগুলোর তেমন সমস্যা নেই। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, এক মাসের মধ্যে কারো ভেড়া মারা গেলে, সেগুলোর দায়দায়িত্ব তারা বহন করবেন। মরে যাওয়া ভেড়ার পরিবর্তে নতুন ভেড়া দেওয়া হবে। এ জন্য তালিকা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সুফিয়ান পিপিআর ও ঠান্ডাজনিত রোগে ছাগলের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এ এলাকায় পিপিআরের টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া সরকারী ভাবে ‘সমতল ভূমিতে বসবাস করা অনগ্রসর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যে ভেড়া দেওয়া হয়েছে তার অবস্থান ও রোগাকান্ত ভেড়ার চিকিৎসা দেয়ার বিষয খোঁজ খবর ও তদারকি অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২২ | সময়: ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ