গাছ চুরির বিচার দাবীতে মানববন্ধন

বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার হারোয়া আনছার-ভিডিপি উন্নয়ন গ্রাম বহুমুখি সমবায় সমিতির লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৪টি মেহগনি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বিচার চেয়ে ওসি, ডিসি, এসপি, ইউএনও, মেয়র, আনছার-ভিডিপির জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করে। বিচার না পাওয়ায় অবশেষে মানবন্ধন করেছে ক্ষুব্ধ সদস্যরা। শুক্রবার বিকেলে উপজেলা হারোয়া গ্রামে সমিতি কার্যালয়ের সামনে ওই মানববন্ধন করেন তারা।
অভিযুক্ত সভাপতি পিকেএম আব্দুল বারী (৪৫) নিজেকে আইপি টিভি মাতৃজগত ও পাবনার সিনসা পত্রিকার প্রতিনিধি এবং বড়াইগ্রাম কেন্দ্রিয় প্রেস ক্লাব নামের একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি হারোয়া গ্রামের মৃত আতাহার উদ্দিন আয়েশের ছেলে। আর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক সিপার (৫০) একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে।
অভিযোগ ও মানববন্ধনে অংশ গ্রহণকারীদের সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে হারোয়া গ্রামে আনছার-ভিডিপির সদস্যদের নিয়ে হারোয়া আনছার-ভিডিপি উন্নয়ন গ্রাম বহুমুখি সমবায় সমিতির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৪ জন। এই সমিতিতে সদস্যরা সাপ্তাহিক সঞ্চয় জমা করে পূজি বৃদ্ধি করেন।
সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে হারোয় মধ্যপাড়া হতে ইক্ষু সেন্টার পর্যন্ত রান্তার পাশের্^ গাছ লাগায় সমিতি কর্তৃপক্ষ। দুই মাস আগে সেই গাছ বন বিভাগ দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে। সেসময় প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্যের ৪টি গাছ সমিতিকে দান করে বন বিভাগ। পরে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক গাছ গুলো সমিতি অনন্য সদস্যেদের না জানিয়ে চুরি করে বিক্রি করে দেয়। এ বিষয়ে সভাপতির নিকট সদস্যরা জানতে চাইলে বলেন, বনবিভাগ দান করবে না। তারাই নিয়ে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করলে তারা কাটেনি বলে জানায়। পরে অনুসন্ধান করে জানাতে পারে বিক্রিত গাছের দু’টি গাছ স্থাণীয় স’মিলে রাখা আছে। সদস্যরা গিয়ে গাছ দু’টি উদ্ধার করে। তারা আরো জানতে পারে গাছ দুইটি প্রকুত মূল্যর চেয়ে কমদামে ৫৩ হাজার টাকায় বিক্রয় করা হয়। আর উদ্ধার দুইটি গাছের কিছু অংশ ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার এই গাছ কাটার সময় একটি গাছ সমিতির বলে বাধা দেয় সভাপকি পিকেএম আব্দুল বারী। পরে ৫৫ হাজার টাকায় ঠিকাদারের সাথে সমঝোতা হয়। সেই টাকাও সভাপতি-সেক্রেটারী আত্নসাৎ করেছে।
সমিতির প্রচার সম্পাদক সিরাজ সরকার বলেন, আমারা লিখিত অভিযোগ করার পর আনছার-ভিডিপির জেলা কার্যালয় থেকে কর্মকর্তা এসে পূর্বের কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। একই সাথে ঘটনা তদন্ত করে সমিতির সদস্যদের নিকট থেকে লিখিত নিয়ে গেলে এখোনো কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়নাই।
সমিতির দাতা সদস্য সফিন প্রামানিক বলেন, আমি জমি দান করেছিলাম এই গ্রামের উন্নয়নে। সমিতির প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক টাকা পয়সা মেরে খাচ্ছে। হিসাব চাইলে তারা দেয় না।
ঠিকাদার মকছেদ আলী বলেন, আমার নিকট থেকে সমিতির কথা বলে পিকেএম আব্দুল বারী ৫৫ হাজার টাকা নিয়েছিল। পরে সেই টাকা ফেরৎ দিয়েছে। মানববন্ধনে সদস্য ও গ্রামবাসী মিলে শতাধিক লোক অংশ গ্রহণ করেন। এসময় বক্তব্য রাখেন মামুন চৌধুরী, শহিদুল্লাহ মোল্লা প্রমুখ। তারা সাংবাদিক পরিচয়ে আব্দুল বারী গ্রামবাসীকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করেন বলেন অভিযোগ তুলেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত সভাপতি পিকেএম আব্দুল বারীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রেজুলেশন করে গাছ কাটা ও বিক্রি করা হয়েছে। বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সিদ্দিক অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ | সময়: ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর