সুস্থ জীবনে ফেরার আকুতি ইসরাত জাহানের

গোমস্তাপুর প্রতিনিধি: জন্মের ছয় মাস পরে ধরা পড়ে হার্টের সমস্যা। তারপর বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে হালকা কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলেও থেমে থাকেনি তাঁর লেখাপড়া। কিন্তু গত চার মাস যাবত হার্টের সমস্যা বেশি অনুভব করায় তার লেখাপড়ার পাশাপাশি সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এমনটি ঘটেছে রহনপুর রাবেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইসরাত জাহানের। পিতা ইউসুফ আলী একজন দিনমজুর। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা। তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে ইসরাত জাহান দ্বিতীয়। আর সাড়ে তিন বছরের একটা ছেলে শাহআলম ও প্রথম সন্তান শাহীন আলী।
দরিদ্র পরিবারে বেশী অভাব অনটন লেগে থাকার কারণে প্রথম সন্তান শাহিন আলী লেখাপড়ায় তেমন সুযোগ পায়নি। তাই সে রাজমিস্ত্রীর কাজে লেগে গেছে পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য। বাবা দিনমজুর প্রতিদিন পরের কামলা (শ্রমিক) খেটে যা আয় করে তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের সংসারে শেষ সম্বল বলতে ভিটেমাটি ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। মেয়ে ইসরাত জাহানের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের জন্য বাড়ির ছোটখাটো জিনিসপত্র ও অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় টাকা জোগাড় করে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করে আসছে। এখন পর্যন্ত প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করেছে তার এ চিকিৎসার জন্য।
ইসরাত জাহানের মা সাহানা বেগম জানান, আমার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় ছেলেটা অভাবের সংসারের জন্য রাজমিস্ত্রির কাজে লাগিয়েছি। তাকে আমরা লেখাপড়া করাতে পারেনি পরিবারের অভাব অনটনের জন্য। জমিজমা বলতে ভিটে মাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার দ্বিতীয় সন্তান ইসরাত জাহান। মেয়েটি জন্ম থেকেই হার্টের সমস্যায় ভুগছে। গত ঈদের পর থেকে তার অসুখ একটু বেশি হওয়ায় সে এখন আর স্কুলে যেতে পারছে না। আমি মা হিসাবে আমার মেয়ের কষ্ট দেখে সহ্য করতে পারছি না। আমি তো চাই আমার মেয়েটা স্কুলে যাক, লেখাপড়া করুক। কিন্তু আল্লাহ যে তাঁর কপালে কি লিখে রেখেছে, সেই মাবুদ জানেন। গত কয়েক মাস আগে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে তার অপারেশন করার জন্য টাকা জোগাড় করতে বলেছে। আবার কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছে ভারতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য। তাই এ অভাব অনটনের সংসারে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত বাড়িয়ে ভিক্ষা করে মেয়েকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলব। যদি আল্লাহতায়ালা সহায় থাকে। তাই আমার মেয়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি।
বাবা ইউসুফ আলী বলেন, আমার মেয়ে ইসরাত জাহান দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যা সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে তাই সকলের সহযোগিতা চাচ্ছি। রহনপুর রাবেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাউসার আলী জানান, ‘ইসরাত জাহান মেধাবী শিক্ষার্থী। কিন্তু সে রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না। তার রোগের কথা শুনে স্কুলে তাঁর সহপাঠীরা তাকে চাঁদা তুলে প্রায় ১৯ হাজার টাকা দিয়েছে। আমরা আশা করি, সে যেন সুস্থ হয়ে আবার তাঁর সহপাঠিদের মাঝে ফিরে আসুক। আর তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজে বিত্তবানদের হাত বাড়ানোর জন্য উদ¦র্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এককালীন চিকিৎসার জন্য যে অনুদান দেয়া হয় সে ক্যাটাগরিতে তারা পড়ে। এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কাছে কোন আবেদনপত্র জমা দেয়নি। দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া তাকে সহযোগিতা করার মত অন্য কোন ফান্ড আমাদের কাছে নেয়।


প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২২ | সময়: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ