সর্বশেষ সংবাদ :

রাবি ছাত্রের মৃত্যু : বাদশার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ আ’লীগ ফুঁসছেন রাবি শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র এমজিএম শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সদর আসনের সংসদ-সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার বক্তব্য নিয়ে ফুঁসছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। রামেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের মানববন্ধনে সম্প্রতি দেওয়া একাধিক বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন রাবির ছাত্র শিক্ষক ছাড়াও নগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ গত বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ছাত্রমৈত্রীর সম্মেলনে বাদশার আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং রাবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বাদশার বক্তব্যকে উসকানিমূলক বলে মনে করছেন। তারা মনে করছেন তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে যেমন বিভাজন বাড়বে তেমনি রাবিতে আবারও মৌলবাদী রাজনীতি উৎসাহিত হবে।
জানা গেছে, বুধবার বিকালে মহানগর ছাত্রমৈত্রীর ২৭তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তিনি গত ১৯ অক্টোবর রাতে রাবির হলের ছাদ থেকে পড়ে শাহরিয়ার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং পরে রামেক হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে বক্তব্য দেন।
ওই বক্তব্যে বাদশা বলেন, রাবিতে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ধারা আমরাই প্রতিষ্ঠা করেছি। সুতরাং এ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কেউ অপরাজনীতি করতে চাইলে তার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এসব দেখে আমরা চুপ করে থাকব না। রামেক হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা। তাদের ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুরের প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ২২ অক্টোবর মানববন্ধন করেন।এ মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এমপি ফজলে হোসেন বাদশা রাবি শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী অ্যাখ্যায়িত করে তাদের শাস্তি দাবি করেন। এর একদিন পর ২৩ অক্টোবর বিক্ষুব্ধ রাবি শিক্ষার্থীরা ফজলে হোসেন বাদশাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
ওই দিন ফজলে হোসেন বাদশা এক সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তিনি রাবির শিক্ষক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জামায়াত-শিবির দ্বারা প্রভাবিত বলে মন্তব্য করেন। এরপর বুধবার সন্ধ্যায় ছাত্রমৈত্রীর সম্মেলনে দেওয়া দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি রাবি প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন।
এদিকে সদ্য অনুষ্ঠিত রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বাদশা বলেন, কয়দিন আগে হয়ে যাওয়া রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন নেতা কার পক্ষে ছিলেন, তার একটি হালখাতা হবে। সেই হালখাতা দেখে সিদ্ধান্ত হবে তারা কার লোক। তারা আওয়ামী লীগের না জামায়াতের না মুখোশধারী আওয়ামী লীগের লোক। ওয়ার্কার্স পার্টি সমর্থন দিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। মীরজাফররা পরাজিত হয়েছেন।
বাদশার এমন বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত তিনবার ফজলে হোসেন বাদশা নৌকার টিকিট নিয়ে এমপি হয়েছেন। কিন্তু তিনি এমপি হয়ে বার বার রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করেছেন। কখনও মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে, কখনো এমপি ফারুকের সঙ্গে আবার কখনো মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন প্রকাশ্যে। কখনো কখনো দ্বিতীয় সারির নেতাদের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। কিন্তু এই ১৫ বছরে এমপি বাদশা রাজশাহীর উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। ফলে তার উদ্দেশ্যই হলো নৌকার টিকিট নিয়ে আওয়ামী লীগের ক্ষতি করা।’
এদিকে রাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এমপি বাদশার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণার পাশাপাশি কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। শিক্ষার্থীদের মাঝে এখনো ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। রাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাজদার হোসেনসহ আরও অনেকেই বলেন, এমপি বাদশার এমন বক্তব্য কাণ্ডজ্ঞানহীন। তিনি রাবিতে পড়ে এমন কথা বলে রাবিকে ছোট করেছেন।
অপরদিকে সংসদ-সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাব্বির সাত্তার বলেন, সংসদ-সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা একজন সম্মানিত ব্যক্তি ও রাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি রামেক হাসপাতালের ঘটনাকে সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে আগুনে ঘি ঢেলেছেন। উসকানিমূলক বক্তব্যও দিচ্ছেন। তার মতো মানুষের কাছ থেকে এটা আশা করি না।
এমপি বাদশার বুধবার সন্ধ্যার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২২ | সময়: ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ