পশ্চিমাঞ্চল রেল কমছে না বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ

স্টাফ রিপোর্টার : লাগাতার অভিযানের পরও পশ্চিমাঞ্চল রেলের বিভিন্ন লাইনে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে বিনা টিকিটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এক দুদিন পরপরই পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার নিজেই আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেনে অভিযান চালাচ্ছেন। কিন্তু তাতে বিনা টিকিটের যাত্রীর সংখ্যা কমছে না। প্রতিটি অভিযানে দুই থেকে আড়াইশ’জন করে বিনা টিকিটের যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে।
বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণের দীর্ঘকালীন কু-সংস্কৃতি থেকে একশ্রেণির যাত্রীও বের হতে পারছেন না।
রাজশাহীর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সদর দপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, এমনও যাত্রী আছেন যারা চেকিংয়ের সময় একাধিকবার ধরা পড়েছেন ভিজিলেন্স টিমের অভিযানে। টিকিট না কাটায় মোটা অংকের জরিমানা গুনেছেন। কিন্তু তাতেও বিনা টিকিটে ভ্রমণের কু-অভ্যাস থেকে বের হতে পারছেন না তারা। এতে প্রতিনিয়ত রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর রেলের আর্থিক লোকসানের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। জানা গেছে, অসীম কুমার তালুকদার পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ৪৫টির বেশি অভিযান পরিচালনা করেছেন। প্রতিটি ট্রেনেই বিনা টিকিটের বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে ধরে জরিমানা আদায় করেছেন।
জানা গেছে, প্রধান স্টেশন রাজশাহী ও পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি প্রান্তিক স্টেশন থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ৩২টির বেশি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ১৪টি ট্রেনই আন্তঃনগর এক্সপ্রেস। ঢাকাগামী আন্তঃনগর বনলতা ট্রেনটি বিরতিহীন।
গত ১০ অক্টোবর পশ্চিমাঞ্চল জিএমের নির্দেশে পাকশী রেল ডিভিশনের বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে টিকিটবিহীন যাত্রী ধরতে বঙ্গবন্ধু পশ্চিম ও পূর্ব স্টেশনে দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করা হয়। পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী বনলতা, ধূমকেতু, পদ্মা, সুন্দরবন, চিত্রা, দ্রুতযান, কুড়িগ্রাম ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটের ২৭৫ জন যাত্রীকে ধরে তাদের কাছ থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এই সাতটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে দৈনিক পাঁচ শতাধিক যাত্রী বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে রেলের দৈনিক আর্থিক ক্ষতি হয় দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা করে। এই হিসাবে শুধু এক মাসে রেলের ক্ষতি হয় ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, এর আগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী পাঁচটি আন্তঃনগর ট্রেনে অভিযান চালিয়ে একদিনে ৮৩৫ জন বিনা টিকিটের যাত্রীকে ধরা হয়। তাদের কাছ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। গত ২১ অক্টোবর ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী পদ্মা আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে নিজেই যাত্রী হয়ে রাজশাহীতে ফিরছিলেন জিএম। ট্রেনে প্রচুর সিটবিহীন যাত্রী দেখে অভিযান শুরু করেন। এই একটি মাত্র ট্রেন থেকে বিনা টিকিটের ১৬৫ জন যাত্রীকে ধরেন ও তাদের কাছ থেকে ৫৭ হাজার ৭৪০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী বিরতিহীন এক্সপ্রেস ট্রেন বনলতাতেও বিনা টিকিটের যাত্রী বহনের অভিযোগ রয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর বিকালে বনলতার যাত্রী হয়ে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফিরছিলেন পশ্চিমাঞ্চল জিএম অসীম কুমার তালুকদার। তিনি সিটে না বসে ভ্রমণকারী যাত্রীদের টিকিট দেখতে শুরু করেন। বনলতাতেও তিনি ২৫ জন বিনা টিকিটের যাত্রীকে ধরেন। তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
জিএম অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বিনা টিকিটে রেলভ্রমণ একটি অপরাধ। এটা জেনেও কিছু মানুষের স্বভাবই বিনা টিকিটে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন ভ্রমণ করা। বিনা টিকিটের যাত্রীদের রেলভ্রমণে সহায়তা করে রেলের একশ্রেণির কর্মচারী যারা বিভিন্ন সময়ে চলমান ট্রেনগুলোতে কর্তব্যরত থাকেন।
প্রতিটি অভিযানের সময় কর্তব্যরতদেরও সতর্ক করা হয়। পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল মিলে দেশে দৈনিক ১০৫টি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে বিভিন্ন গন্তব্যে। এই ১০৫টি ট্রেনে দৈনিক অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বিনাটিকিটের রেল ভ্রমণ বন্ধ করতে না পারায়। রেলের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে শতকরা ২৫ ভাগ যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেন। সব ট্রেন মিলে দেশে শুধু রেল খাতেই দৈনিক দুই কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। এর দায়ভার জনগণের ওপর পড়ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে আরও বলেন, ২০০৭ সালের ২৯ অক্টোবর সরকার রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা রহিত করেন। এরপর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাও বন্ধ রয়েছে। ফলে টিকিটবিহীন যাত্রীদের আর্থিক জরিমানা করা সম্ভব হলেও তাদের সাজা দেওয়া সম্ভব হয় না।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২২ | সময়: ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ