সর্বশেষ সংবাদ :

বাগমারায় চিকিৎসক দম্পতির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় দিনের পর দিন অভিনব কায়দায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী আত্রাই উপজেলার রিয়াশাত উল লতিফ ওরফে ডা. মামুন ও তার স্ত্রী ডা. নাহিদা ইয়াসমিন। ভবানীগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে চার বছর ধরে হাজরো মানুষকে প্রতারিত করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
ভবানীগঞ্জ পৌরশহরের চাঁনপাড়া মহল্লার মাসুদ রানা নামের এক ব্যক্তি জনস্বার্থে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ডা. মামুন ও তার স্ত্রীর প্রতারণার ফিরিস্তি তুলে ধরে অভিযোগ করলে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়।
রবিবার এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়লে বাগমারার সচেতন মহলে তুমুল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ভবানীগঞ্জ পৌরশহরের ক্লিনিক পাড়া সহ বিভিন্ন চায়ের দোকান ও সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনদের মাঝে কথিত ডায়াবেটিক সেন্টারের প্রতারণার বিষয়টি আলোচিত হতে থাকে।
প্রকাশিত খবর ও ভোক্তা অধিকারের অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাগমারার ভবানীগঞ্জ হেলিপ্যাড মাঠের পাশে একটি ভবনে ভবানীগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টার নামের প্রতিষ্ঠানটি প্রায় চার বছর ধরে ডায়াবেটিক চিকিৎসার নামে স্থানীয় মানুষের সাথে অভিনব উপায়ে প্রতারণা করে আসছে।
প্রকৃতপক্ষে ডায়াবেটিক চিকিৎসায় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোন প্রতিষ্ঠান না হয়েও তাদের প্রচার-প্রচারণা ও সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে রিপোর্ট প্যাড এবং অন্যান্য স্টেশনারী সামগ্রীতে সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মনোগ্রাম বা লোগো ব্যবহার করে সাধারন মানুষের সামনে নিজেদের ডায়াবেটিক চিকিৎসায় বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরে আসছে। তাদের এই প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে বাগমারা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজারো মানুষ সেখানে সেবা নিয়ে প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পতিত হচ্ছে।
এছাড়াও অভিযোগে আরো উল্লেখ রয়েছে, ভবানীগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টার সি ক্যটাগরির একটি ল্যাব হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিবন্ধিত হলেও সি ক্যটাগরির ল্যাবে করার অনুমতি নেই এরকম বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেখানে করা হয়। এক্স-রে, হরমোন টেস্ট, আল্ট্রাসনোগ্রাম ইত্যাদি পরীক্ষা করার মত যোগ্যতা সম্পন্ন জনবল ও রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক ছাড়াই করে থাকে এবং রিপোর্ট প্রদান করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বিভ্রান্তিকর মূল্য তালিকা প্রদর্শন করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকে এবং রোগীদের রিপোর্ট প্রদানের সময় টাকা গ্রহণের রশিদ ফেরত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী স্বাক্ষরিত একটি শমন নোটিশ গত ১০ অক্টোবর ভবানীগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টার বরাবর পাঠানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দন্ডযোগ্য অপরাধ। এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানির জন্য প্রতিষ্ঠানটির মালিক পক্ষকে ২৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে নয়টার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টারের মালিক ডা. রিয়াশাত উল লতিফ মামুনকে ফোন করা হলে তিনি ভোক্তা অধিকারে তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, যা বলার ২৭ তারিখের শুনানিতে বলা হবে।
অভিযোগকারী মাসুদ রানা জানান, কথিত ডায়াবেটিক সেন্টারের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে তা বন্ধ করার জন্য জনস্বার্থে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের স্মরণাপন্ন হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. মামুন ও ডা. নাহিদা দম্পতি ভবানীগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। চার পাঁচ বছর আগে নিজেদের ডায়াবেটিক চিকিৎসায় বিশেষায়িত ঘোষণা দিয়ে ভবানীগঞ্জ গোডাউন মোড়ের একটি ভবনে কার্যক্রম শুরু করে তারা।
ডা. মামুন নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ এলাকার বিহারীপুর গ্রামের লোকমান আলী চৌধুরীর ছেলে। মামুন ও নাহিদা একসাথে পড়াশুনা করেছেন।
ডা. রিয়াশাত উল লতিফ ওরফে মামুন নিজে ডায়াবেটিস, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন রোগের চিকিৎসক হিসেবে সাইনবোর্ডে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে তার স্ত্রী ডা. নাহিদা ইয়াসমিন ডায়াবেটিস, গাইনী, শিশু ও সনোলজিস্ট হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ডা. মামুন প্রচন্ড অহংকারী ও বদরাগী একজন মানুষ। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা ভাল না। তিনি জোর গলায় বলে বেড়ান, ‘এমপি আমার চেম্বারে এসে চা খায়’। উচ্চ মহলের সাথে সম্পর্ক ও অর্থবিত্তের মালিক হওয়ায় ডা. মামুনের প্রতারণার বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না।
বাগমারা উপজেলার দক্ষিণ মাঝগ্রামের জলি খাতুন নামের একজন ভুক্তভোগী জানান, তিনি ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত না হলেও ঐ প্রতিষ্ঠানে করা পরীক্ষার রিপোর্টে তার ডায়াবেটিক রোগ দেখিয়ে সেই জন্য চিকিৎসা নিতে বলা হয়। পরে তিনি অন্য একাধিক প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হোন তার ডায়াবেটিক রোগ নেই।
এবিষয়ে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম রাব্বানী জানান, ডায়াবেটিক চিকিৎসায় তাদের কোন অনুমতি আছে কি না তার জানা নেই, এটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে বিধি বহির্ভূত কিছু হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই প্রতারণা বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২২ | সময়: ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ