সর্বশেষ সংবাদ :

গভীর নিম্নচাপে উপকূলে বৃষ্টি বন্দরে ৪ নম্বর সংকেত

সানশাইন ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে গভীর নিম্নচাপের রূপ নেওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
নিম্নচাপের প্রভাব ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হতে থাকা এই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র রোববার রাতেই ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি এবং জোয়ারের সময় উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে এবং আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। রোববার বেলা ১২টায় গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১৫ কিলোমিটার কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
রোববার জিএফএস এর পূর্বাভাস মডেলে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিমুখ দেখানো হয়েছে পটুয়াখালী ও সন্দ্বীপের মাঝামাঝি উপকূলীয় এলাকার দিকে। পরিস্থিতি অনুযায়ী এই গতিপথও বদলে যেতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ তখন ছিল ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার বলেন, গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। তখন এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘সিত্রাং’। এই নাম থাইল্যান্ডের দেওয়া। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত নামিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরকত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ মনোয়ার বলেন, “এখন তিন নম্বর সংকেত রয়েছে; ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তখন সতর্কবার্তাও বাড়ানো হবে। আজ রাত নাগাদ সার্বিক তথ্য উপাত্ত বিশ্রেষণ করে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা জানানো হবে।”
আন্দামান সাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় বৃহস্পতিবার লঘুচাপটি সৃষ্টি হয়। শুক্রবার তা সুস্পষ্ট লঘুচাপে ও শনিবার নিম্নচাপে এবং রোববার সকালে তা গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, এখন উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হলেও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর ঘূর্ণিবায়ুর চক্রটি বাঁক নিয়ে উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং শক্তি বাড়িয়ে সোমবার প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে সেই ঘূর্ণিঝড় মঙ্গলবার ভোরের দিকে বরিশাল বিভাগের তিনকোনা দ্বীপ ও চট্টগ্রাম বিভাগের সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন।
আবহাওয়াবিদ মনোনয়ার হোসেন জানান, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। “অমাবশ্যা তিথির এ সময়ে গভীর নিম্নচাপ ও বায়ুচাপের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের দ্বীপ ও চরাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের পানির চেয়ে ৩-৫ ফুট পর্যন্ত বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে ।”
রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২২ | সময়: ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ