দুর্গাপুরে জামায়াত নেতার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা, বিস্তর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, দুর্গাপুর: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মৃত হাফিজ মোঃ নুরুজ্জামানের ছেলে গোলাম মোঃ কিবরিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। দুর্গাপুর পৌর সদরের সিংগা মহল্লার ব্যবসায়ী বকুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর সিআর ৩৪১/২২ (দুর্গাপুর)। বিজ্ঞ আদালত বাদীর আরজি আমলে নিয়ে দুর্গাপুর থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দিয়েছেন।

 

উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মৃত হাফিজ মোঃ নুরুজ্জামানের ছেলে গোলাম মোঃ কিবরিয়া ও সিংগা গ্রামের মৃত খবির উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান সহ এই মামলায় মোট ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।

মামলার আরজিতে বাদী অভিযোগ এনেছেন, বাদী প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। অপরদিকে ১নং আসামী কিবরিয়া ও ২ নং আসামী হাবিবুর বখাটে এবং মাস্তান প্রকৃতির ব্যাক্তি। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল অনুমান ১০ টার দিকে বাদীর ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাদীর কাছে চাঁদা দাবি করে আসামীরা বলেন, এলাকায় ব্যবসা করতে হলে আমাদের লাভের ভাগ দিতে হবে। আসামীদের এমন প্রস্তাবে রাজি না হলে সাক্ষীদের সামনেই বাদীকে নানা রকম ভয়ভীতি ও বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করার হুমকী দেয়।

আসামীরা আরও বলে, আমাদের সাথে বিভিন্ন পত্রিকার যোগাযোগ আছে। তোর ব্যবসায়ীক সুনাম নষ্ট এবং সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে খবর প্রকাশ করবো। এর প্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন ৩, ৪ ও ৫ নং আসামীদের পরিচালিত একটি ওয়েব পোর্টালে বাদীর নামে বানোয়াট, মানহানিকর এবং মিথ্যা খবর প্রকাশ করে। কোনো ধরনের সত্য মিথ্যা যাচাই না করে বাদীর বক্তব্য ছাড়াই খবরটি প্রকাশ করে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছে। এতে বাদীর ব্যবসায়ীক ও সামাজিক সুনাম খুন্ন হয়েছে। কল্পনাপ্রসূত ওই খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার পর ২নং আসামী বাদীকে উদ্দেশ্য করে মনগড়া বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে বাদীকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। আসামীরা যোগাসাজস করে ওয়েব পোর্টালে খবর প্রকাশ করে বাদীর মানসম্মান খুন্ন করায় বাদী বর্তমানে প্রচন্ড মানসিক ভাবে ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। যার দরুন বাদী বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।

রাজশাহীর আমলী আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বাদীর আরজি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে এই অভিযোগ ছাড়াও ১ং আসামী গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে একজন প্রকৌশলী সহ সরকারি দুইজন কর্মকর্তাকে হুমকী দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অফিসে গিয়ে ও মোবাইল ফোনে সরকারি কর্মকর্তাদের বিব্রত করা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভীতিপ্রদর্শন করে থাকে সে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, অফিস সময়ে অফিসে গিয়ে এবং অফিস সময় ছাড়াও মোবাইল ফোনে কল করে দাপ্তরিক বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অবাঞ্ছিত প্রশ্ন করে চাপ প্রয়োগ করে থাকে গোলাম কিবরিয়া। যেটা এক ধরনের ঠান্ডা মাথায় হুমকীর শামিল। বিষয়টি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলেও জানান ওই সরকারি কর্মকর্তা।

জানা গেছে, গোলাম কিবরিয়ার পিতা মৃত হাফিজ মোঃ নুরুজ্জামান উপজেলা জামায়াতের আমীর ছিলেন। নাশকতামূলক কর্মকান্ডের প্রস্তুতি নেয়ার সময় গোপন বৈঠক থেকে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি হাফিজ মোঃ নুরুজ্জামান সহ ১২ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করেছিলো থানার পুলিশ। এ সময় জিহাদি বই ও সরকার বিরোধী লিফলেট জব্দ করেছিলো পুলিশ। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এম এম আবু জাফর বাদী হয়ে থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন। কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে জামায়াতের আমীরের পদ থেকে ও সিংগা হাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমামের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন হাফিজ নুরুজ্জামান। ওই অভিযানের সময় বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন শিবির কর্মী গোলাম কিবরিয়া। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় এলাকায় ফিরে গোলাম কিবরিয়া। এলাকায় ফিরে আসার কিছুদিন পর ভোল পাল্টে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সংস্পর্শে থেকে নিজেক আওয়ামী পরিবারের সন্তান পরিচয় দিতে থাকে। নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দাবি করে সরকারি বিভিন্ন সভা-সেমিনারেও অংশ নেয় গোলাম কিবরিয়া। গোলাম কিবরিয়ার মুখোশ উন্মোচন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে দূরে সরিয়ে দেন। তবে থেমে থাকেনি গোলাম কিবরিয়ার জামায়াতী সাংগঠনিক কার্যক্রম।

সরকারি অফিস আদালতে ঘোরাঘুরি করে গোপন খবর সংগ্রহ করে জামায়াত নেতাদের কাছে পৌছানোই তাঁর মূল উদ্দেশ্য। বিশেষ উদ্দেশ্যে সখ্যতা গড়ে তুলে ইতিমধ্যে সরকারি বেশ কিছু সুযোগ সুবিধাও সে বাগিয়ে নিয়েছে। অল্পবয়সী গোলাম কিবরিয়ার চাতুরির কাছে কোন কিছুই যেন দুঃসাধ্য নয়। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে নৈশপ্রহরীকে জেল খাটানোর হুমকি যেন তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাধ্য হয়ে ওই নৈশ প্রহরী আইনের আশ্রয় নেন।

দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ব্যবসায়ী বকুল ইসলামের আরজি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন সহ তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এছাড়া অন্যান্য অভিযোগ গুলোও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২২ | সময়: ৪:২৫ অপরাহ্ণ | সানশাইন